কুমারখালীতে জুতার মালা পরানো সেই গ্রাম পুলিশ গ্রেপ্তার

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে এক গৃহবধূর সঙ্গে পরকীয়া প্রেমের অভিযোগে জুতার মালা পরানো সেই গ্রাম পুলিশ সুশান্ত চন্দ্র দাসকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আজ বুধবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এর আগে, গতকাল মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) রাতে উপজেলার নন্দলালপুর ইউনিয়নের সোন্দাহ গ্রাম থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
সুশান্ত চন্দ্র দাস উপজেলার সোন্দাহ গ্রামের বাসিন্দা। তিনি নন্দলালপুর ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দুই সন্তানের জননী এক গৃহবধূর সঙ্গে ওই গ্রাম পুলিশের অনৈতিক সম্পর্ক থাকার অভিযোগ পেয়ে গত রোববার সালিশ বসায় গ্রামবাসী। এ সালিশে দুজনের ফোনকলের অডিও শোনা হয়। এরপর স্বজনদের মতামতের ভিত্তিতে স্বামী-স্ত্রীর তালাক হয়। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে জনতা ওই গ্রাম পুলিশের গলায় জুতার মালা পরিয়ে গ্রাম ঘোরায়। আর গত মঙ্গলবার রাতে তালাকপ্রাপ্ত স্বামী বাদী হয়ে কুমারখালী থানায় ওই গ্রাম পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যভিচার আইনে মামলা করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফোনে মামলার বাদী মিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ঢাকায় থাকি। বিভিন্ন কাজের অজুহাতে গ্রাম পুলিশ সুশান্ত আমার বাড়িতে গিয়ে প্রলোভন দেখিয়ে আমার স্ত্রীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক করেন। ফোন রেকর্ডে যার প্রমাণ রয়েছে। বুঝতে না পেরে প্রথমে গ্রামবাসীর কাছে বিচার দিয়েছিলাম। বিচারের দিন আমার শ্বশুর-শাশুড়ি তাদের মেয়েকে তালাক দিয়ে নিয়ে গেছেন। আমি বিচারের আশায় থানায় মামলা করেছি। তবে জুতার ঘটনাটি আমরা চলে আসার পরে হয়েছে।’
স্থানীয়রা জানান, গ্রাম পুলিশ সুশান্তের বিরুদ্ধে আগেও মেয়েদের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের অভিযোগ ছিল। এবারের ঘটনায় তার ফোন রেকর্ডে অনেক প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে লোকজন গ্রাম পুলিশকে জুতার মালা পরিয়ে বাড়ি পাঠিয়েছে।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ওই গ্রাম পুলিশের স্ত্রী চুমকি রাণী বলেন, ‘আমার স্বামীর কোনো দোষ নেই। তবুও সেদিন গ্রামের লোকজন ডেকে নিয়ে জুতার মালা পরিয়েছে। আবার রাতে পুলিশ তাকেই ধরে নিয়ে গেছে। আমি সঠিক বিচার চাই।’
সেদিনের সালিশে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় মাতবর আবু তালহা রাসেল। তিনি বলেন, বিক্ষুব্ধ জনতা গ্রাম পুলিশকে মারধর করার পাঁয়তারা করছিল। সে জন্য কৌশল অবলম্বন করে তাকে জুতার মালা পরিয়ে সেভ (বিপদমুক্ত) করা হয়েছে। তার ভাষ্য, গ্রাম পুলিশ সুশান্তের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। ফোনকলে স্ত্রীর সঙ্গে গ্রাম পুলিশের অনৈতিক সম্পর্কের প্রমাণ পাওয়ায় ওই নারীকে তালাক দেন তার স্বামী।
কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সোলায়মান শেখ জানান, মঙ্গলবার রাতে ওই নারীর স্বামীর করা ব্যভিচার মামলায় গ্রাম পুলিশকে গ্রেপ্তার করে আজ বুধবার দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অনৈতিক সম্পর্কের কথা স্বীকার করেছেন অভিযুক্ত গ্রাম পুলিশ। তবে তালাকের বিষয়টি তার জানা নেই।
ওসি মো. সোলায়মান শেখ আরও জানান, যেকোনো ঘটনায় আইন হাতে তুলে নেওয়া ঠিক নই। জুতার ঘটনায় লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, গ্রাম পুলিশের বিরুদ্ধে অনৈতিক সম্পর্ক এবং তাকে জুতার মালা পরানো উভয় ঘটনায় তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলে যাবে।