ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা

পুতুল নাচ, লাঠি খেলা, নৌকাবাইচ, যাত্রাপালাসহ বাঙালি সংস্কৃতির ধারক ও বাহক হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া বেশ পরিচিত। আধুনিকায়নের এই যুগে হারিয়ে যেতে বসেছে সেসব ঐতিহ্য। তবে দীর্ঘদিন পরে বাংলা নববর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষে গ্রাম বাংলার হারানো ঐতিহ্যকে বর্তমান প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে অনুষ্ঠিত হয় ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা।
গতকাল শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) বিকেলে উপজেলার কুড়িঘর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে উৎসবমুখর পরিবেশে লাঠিয়াল দল গ্রাম-বাংলার হারানো ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা, ঢাক-ঢোল আর কাঁসার ঘণ্টার তালে তালে প্রদর্শন করেন। প্রতিপক্ষের লাঠির আঘাত থেকে নিজেকে রক্ষা ও পাল্টা আঘাত করতে ঝাঁপিয়ে পড়েন লাঠিয়ালরা। তাতে করতালির মাধ্যমে উৎসাহ দেন উপস্থিত হাজার হাজার দর্শক।
খেলা দেখতে আসা দর্শকরা বলেন, ‘এখন আগের মতো লাঠি খেলা হতে দেখি না। এখানে লাঠি খেলা হবে শুনে দেখতে এসেছি। তবে দীর্ঘ দিন পর হলেও লাঠি খেলার অনুষ্ঠান করায় আমরা অনেক খুশি।’ তারা আরও বলেন, লাঠি খেলা বাঙালির সংস্কৃতির একটি অংশ কিন্তু আধুনিকায়নের ফলে এটি হারিয়ে যেতে বসেছে। বাংলা সংস্কৃতি ধরে রাখতে আগামীতেও এমন আয়োজনের প্রত্যাশা করেন তারা।
কুড়িঘর গ্রামবাসীর আয়োজনে লাঠি খেলার শুভ উদ্বোধন করেন নবীনগর প্রেসক্লাবের সভাপতি সাংবাদিক মো. হোসেন শান্তি। লাঠি খেলায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজহিতৈষী নজরুল ইসলাম।
মো. নান্নু মিয়ার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন নবীনগর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শ্যামাপ্রসাদ চক্রবর্তী শ্যামল, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইদুল আলম সোরাফ, আনন্দ টিভির প্রতিনিধি আবু কাউছার, বাংলা টিভির প্রতিনিধি পিয়াল হাসান রিয়াজ, কুড়িঘর উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. মাসুদুর রহমান, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দীন আহমেদ মহিন।
লাঠি খেলায় আমন্ত্রিত অতিথিরা মনে করেন আধুনিক সভ্যতা ও প্রযুক্তির ছোঁয়ায় লাঠি খেলা হারিয়ে গেলেও সমাজের সকল স্তরের মানুষের সহযোগিতায় আবারও বাঙালির ঐতিহ্যবাহী এ খেলা সংশ্লিষ্টরা আগের মতো নিয়মিত আয়োজন করবেন।
আয়োজকেরা বলেন, ঐতিহ্যবাহী লাঠি খেলা প্রায় বিলুপ্তির পথে এবং এই খেলার সাথে যারা জড়িত রয়েছেন তারা দিনদিন হারিয়ে যাচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী এ খেলাকে টিকিয়ে রাখতে এবং নতুন প্রজন্মের কাছে এর পরিচিতি বাড়াতেই তারা লাঠি খেলার আয়োজন করেছেন। খেলা শেষে অতিথিদেরকে সম্মাননা স্মারক ও খেলোয়াড়দের মাঝে পুরস্কার প্রদান করা হয়।