খায়রুল হককে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার দাবি আইনজীবী ফোরামের

সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি ও বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান সিনিয়র আইনজীবী জয়নুল আবেদীন।
আজ মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের সামনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জয়নুল আবেদীন এ দাবি জানান।
দেশের বিচার বিভাগ ও গণতন্ত্র ধ্বংসের মূল কারিগর, সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও বিচার এবং দুর্নীতিবাজ বিচারকদের অপসারণের দাবিতে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম এই বিক্ষোভ মিছিল ও আইনজীবী সমাবেশ করে।
জয়নুল আবেদীন বলেন, এ দেশের গুমের রাজা কে? খায়রুল হক। ইন্ধনদাতা কে? খায়রুল হক। এই খায়রুল হক কার নির্দেশে আজকে গুম-খুনের রাজা হয়েছেন? শেখ হাসিনা সরকারের নির্দেশে। যে ফ্যাসিস্ট হাসিনার নির্দেশে এই বিচার বিভাগ চালিয়েছেন, যে ফ্যাসিবাদ হাসিনার নির্দেশে এ দেশের ছাত্র-জনতাকে গুম-খুনের মধ্য দিয়ে গেছেন—তিনি কীভাবে এখনও গ্রেপ্তার হচ্ছেন না, আমি বুঝতে পারছি না।
জয়নুল আবেদীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, খায়রুল হক বাংলাদেশকে ধ্বংস করেছেন। গণতন্ত্র ধ্বংস করেছেন। তিনি আইনের শাসনকে ধ্বংস করে দিয়েছেন। যিনি বিচার বিভাগকে ধ্বংস করে দিয়েছেন, তাঁর বেলায় কোনো কথা এখনও তার মুখে শুনি না। আপনাকে সতর্ক করছি। আপনাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ফ্যাসিস্টদের বিচার করার জন্য। কিন্তু আপনি এই বড় ফ্যাসিস্টের নাম একবারও মুখে নেন না। দেশ-জাতি আশা করে আপনি অবিলম্বে এই ফ্যাসিস্টকে গ্রেপ্তারের জন্য আদালত থেকে আদেশ গ্রহণ করবেন।
জয়নুল আবেদীন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, শেখ হাসিনা বিনা অপরাধে যদি আপনার বিচার করতে পারে, আপনারও দায়িত্ব যিনি দেশ ধ্বংস করেছেন এবং শেখ হাসিনাকে যিনি দিনের পর দিন ফ্যাসিস্ট বানানোর জন্য সাহায্য সহযোগিতা করেছেন বিচার বিভাগের মাধ্যমে তাঁর বিচার করা এবং তাঁকে গ্রেপ্তার করা। কিন্তু কেন আপনি তাঁকে গ্রেপ্তার করছেন না। আজকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের পক্ষ থেকে বলছি, আমাদের যেন আর কোনো কর্মসূচি দিতে না হয়। তার আগে আপনি স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আমরা খায়রুল হককে গ্রেপ্তার দেখতে চাই।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ও বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, অবিচারক খায়রুল হকের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সম্পর্কে আমরা আইনজীবীরা প্রত্যক্ষ সাক্ষী। আর সারা বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ পরোক্ষ সাক্ষী। যেহেতু আমরা আইনজীবীরা প্রত্যক্ষ সাক্ষী তাই জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতৃত্বে আইনজীবী সমাজ খায়রুল হকের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছি।
কায়সার কামাল আরও বলেন, “ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজল বলেছেন, ‘আমরা কিন্তু খায়রুল হকের বাড়ি চিনি।’ আমি সঙ্গে যোগ করব—যারা খায়রুল হককে গ্রেপ্তার করছে না, তাদের অফিস ও বাড়ি কিন্তু আমরা চিনি। অতএব চেনা বাড়িতে যাওয়ার জন্য বাধ্য করবেন না। আইনজীবী সমাজ জানে কীভাবে দাবি আদায় করতে হয়। আমরা বাড়িতে যেতে চাই না। আমাদের বাধ্য করবেন না। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি, অবিলম্বে আইনজীবীদের দাবি মেনে নিন। অন্যথায় খায়রুল হকের বাড়ি, উপদেষ্টাদের বাড়ি এবং অফিসে কিন্তু আইনজীবীরা যেতে বাধ্য হবেন।”
এ সময় ব্যারিস্টার কায়সার কামাল খায়রুল হককে গ্রেপ্তার ও বিচারের মুখোমুখি করা এবং দুর্নীতিবাজ বিচারকদের অপসারণের দাবিতে আগামী ৭ মে বুধবার বেলা ১টায় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান গেটের সামনে আইনজীবী সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম সুপ্রিম কোর্ট ইউনিটের আহ্বায়ক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদলের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব গাজী তৌহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় আইনজীবী সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন সংগঠনটির সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস কাজল, ফোরামের সাংগঠনিক সম্পাদক গাজী কামরুল ইসলাম সজল।
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ আলী, বাংলাদেশ আইন সমিতির আহ্বায়ক মো. মনির হোসেন, মো. আক্তারুজ্জামান, মোরশেদ আল মামুন লিটন, সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক ট্রেজারার মোহাম্মদ কামাল হোসেন, বর্তমান ট্রেজারার রেজাউল করীম রেজা, জিয়াউর রহমান, মো. মাকসুদ উল্লাহ, আনিসুর রহমান রায়হান প্রমুখ।