মাদকাসক্ত ছেলেকে গলাকেটে হত্যা করে থানা গেলেন বাবা

গাজীপুরের শ্রীপুরে মাদকাসক্ত ঘুমন্ত ছেলেকে ধারালো বটি দিয়ে গলাকেটে হত্যা করেছে বাবা। পরে থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেন বৃদ্ধ বাবার। গতকাল মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) দিনগত রাত ৩টার দিকে উপজেলার প্রহ্লাদপুর ইউনিয়নের নানাইয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ছেলে মো. আনোয়ার (২৫) উপজেলার প্রহ্লাদপুর ইউনিয়নের নানাইয়া গ্রামের মোহাম্মদ আলীর ছেলে। অভিযুক্ত বাবা মোহাম্মদ আলী (৬৫) প্রহ্লাদপুর ইউনিয়নের নানাইয়া গ্রামের প্রয়াত আব্দুর রশীদের ছেলে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মণ্ডল।
অভিযুক্ত বাবা মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘আমার ছেলের কথা কি বলবো। আমার কত লাখ টাকা যে শেষ করছে তার কোনো শেষ নেই। আমাকে নিঃস্ব করে ফেলেছে এই মাদকাসক্ত ছেলে। আমার অগোচরেই আমার ৭টি গরু চুরি করে বিক্রি করছে। পুকুরের মাছ ও গাছ বিক্রি করে নেশায় খরচ করে আমাকে ফকির বানিয়ে ফেলছে। বাধা দিতে গেলে আমাকে হত্যা করতে আসে। মাদকাসক্ত থেকে ফেরাতে মাদক নিরাময় কেন্দ্রে দিয়েও ছেলেকে ফেরাতে পারিনি। গত কয়েকদিন আগেও পুকুরের মাছ জোরপূর্বক বিক্রি করে দেয়। এগুলো নিয়ে সবসময় ছেলের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হতো।’
মোহাম্মদ আলী আরও বলেন, ‘গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে মাদকাসক্ত ছেলে আমার গরুগুলোকে অনেক আঘাত করেছে। গরুকে আঘাত করার বিষয়টি জানতে পেরে আমি তাকে বকাঝকা করি। বারবার গরুকে মারতে নিষেধ করলেও সে আমাকেও মারধর করে। আমাকে সজোরে কয়েকটি ঘুষি মারে। এরপরই আমি তাকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেই। রাত ৩টার দিকে ধারালো বটি দিয়ে ছেলেকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গলাকেটে হত্যা করি এবং ভোরে থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করি।’
স্থানীয় বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘নিহত আনোয়ার হোসেন বিদেশ থেকে এসে মাদক সেবনের দিকে ঝুঁকে পড়ে। ছেলে বাবার কাছে বিভিন্ন সময় টাকা দাবি করতেন। কিন্তু বৃদ্ধ বাবা অনেক চেষ্টা করেও তাকে ফেরাতে পারেননি। কয়েকবার বিদেশে পাঠিয়েছেন। তবুও ছেলেকে ফেরাতে পারেনি। গরু বিক্রি, মাছ বিক্রি, গাছ বিক্রি এমন কোনো কিছু বাদ দেয়নি মাদকাসক্ত ছেলে। মানুষ কতটা অতিষ্ঠ হয়ে এবং ধৈর্যের মাত্রা কতটা অতিক্রম করলে বাবা তার সন্তানকে হত্যা করতে পারে।’
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জয়নাল আবেদীন মণ্ডল বলেন, ভোরে থানার সামনে এসে এক বৃদ্ধ তার মাদকাসক্ত ছেলেকে জবাই করে হত্যা করছে বলে থানায় এসে জানায়। এরপর তাকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে নিহতের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ চলমান রয়েছে।