ইতালিসহ ইউরোপীয় দেশগুলোতে বৈধ অভিবাসন বৃদ্ধির কাজ চলছে : আসিফ নজরুল

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, ইতালিসহ ইউরোপীয় দেশগুলোতে বৈধ অভিবাসন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ চলছে। ইতোমধ্যে পর্তুগাল ও অস্ট্রিয়াসহ ইউরোপের ছয়টি দেশের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সইসহ যুগান্তকারী বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার (৬ মে) ঢাকায় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ ও ইতালির মধ্যে মাইগ্রেশন ও মোবিলিটি-বিষয়ক সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশের পক্ষে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এবং ইতালির পক্ষে সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তেদোসি সমঝোতা স্মারকে সই করেন। অবৈধ অভিবাসন বন্ধে এবং বৈধ অভিবাসন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইতালির সঙ্গে প্রথমবারের মতো মাইগ্রেশন অ্যান্ড মবিলিটিবিষয়ক সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করল বাংলাদেশ।
অনুষ্ঠানে ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘বৈধ পথে মাইগ্রেশন বৃদ্ধি করতেই আমাদের এই উদ্যোগ। যারা ইতালি গমনেচ্ছু তারা যেন নিরাপদে যেতে পারেন, ভালো পারিশ্রমিক পান—সেটাই লক্ষ্য আমাদের।’
আসিফ নজরুল আরও বলেন, ‘ইতালি সিজনাল ও নন সিজনাল দুইভাবে লোক নেবে। আমাদের পরিকল্পনা হচ্ছে আমরা জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ করব। তারা বছরে একবার করে মিটিং করবে। আমাদের টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার আছে, সেখানে আমাদের কর্মীরা যাতে ইতালির ভাষা শিখতে পারে—আমরা সে বিষয়ে কাজ করছি।’
উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের অ্যাম্বাসির ফাইলগুলো যেন দ্রুত কার্যকর হয়। এ ছাড়া ইতালিতে যারা বাংলাদেশি ছাত্র আছে, তাদের ভিসা প্রক্রিয়া যেন সহজ হয়। অভিবাসনের দিক দিয়ে আমাদের যেন ইতালির সরকারের ঝুঁকিপূর্ণ তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয় সেই বিষয়টিও আলোকপাত করা হয়েছে।’
ইতালিতে কী পরিমাণ লোক পাঠাবে, কোন কোন সেক্টরে যাবে’—এক সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ড. আসিফ নজরুল বলেন, ‘সমঝোতা স্মারকে এত ডিটেইলস থাকে না। বর্তমানে আমাদের যে কোটা আছে, সেটা বাড়ানো হবে। কোটা বৃদ্ধির বিষয়ে ইতালি চিন্তাভাবনা করবে। আমরা আশা করছি, অবৈধ পথে যাওয়া অনেকটা বন্ধ হয়ে যাবে।’
এ সময় ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তেদোসি বলেন, ‘বাংলাদেশ-ইতালি সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। আমরা সবসময় শ্রমিকদের বৈধপথে আসার জন্য অনুপ্রাণিত করি। ইতালি সরকার দীর্ঘদিন থেকে এটা নিয়ে কাজ করে আসছে। এই সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে দুই দেশের বন্ধুত্ব আরও জোরদার হবে।’
ড. আসিফ নজরুল সম্প্রতি সৌদি সফরের বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, সৌদি আরবে অবৈধভাবে বসবাসকারী নারী কর্মীদের বৈধ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি সংখ্যক দক্ষ ও অদক্ষ কর্মী নেওয়ার বিষয়েও সৌদি সরকারের সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।
উপদেষ্টা জানান, জর্ডানে পুরুষ কর্মীর সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়েও জর্ডান সরকারের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এ ছাড়া জর্ডানে কর্মরত যেসব নারী কর্মী নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মস্থল পরিবর্তনসহ নানা কারণে অবৈধ হয়েছেন তাঁরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে স্বীকারোক্তির মাধ্যমে বৈধ হতে পারবেন। এর ফলে তারা জরিমানা ছাড়াই বৈধতা পাবেন। অন্যথায়, তাদের বড় অঙ্কের জরিমানার মুখোমুখি হতে হবে বলে উপদেষ্টা উল্লেখ করেন।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নেয়ামত উল্যা ভুইয়া ইতালিতে বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থানের এই সমঝোতা স্মারককে একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করেন।