এএসপি পলাশ সাহার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন, স্ত্রীর বিচার দাবি

র্যাব-৭ এ কর্মরত অবস্থায় আত্মহত্যা করা বাংলাদেশ পুলিশের সিনিয়র এএসপি পলাশ সাহার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (৮ মে) দুপুরে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার পাড়কোনা মহাশ্মশানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
এর আগে র্যাব-৬ এর অধিনায়ক কমান্ডার মোহাম্মদ শাহাদাৎ হোসেনের নেতৃত্বে র্যাব-৬ এর পক্ষ থেকে তাঁর মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এসময় র্যাব ও পুলিশের কর্মকর্তারা এবং পলাশ সাহার আত্মীয়স্বজন ও এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।
আজ সকাল ১০টার দিকে পলাশ সাহার মরদেহ অ্যাম্বুলেন্সে করে উপজেলার তারাশী গ্রামে নিজ বাড়িতে আসে। এসময় পলাশ সাহার মা, ভাই-বোনসহ আত্মীয়স্বজন কান্নায় ভেঙে পড়েন। এলাকাজুড়ে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
পলাশ সাহা ছিলেন কোটালীপাড়া উপজেলার তারাশী গ্রামের মৃত বিনয় কৃষ্ণ সাহার ছেলে। ৩ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে পলাশ ছিলেন সবার ছোট।
গতকাল বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে র্যাব-৭ এর চান্দগাঁও ক্যাম্পের তৃতীয় তলার অফিস কক্ষে নিজ নামে ইস্যুকৃত পিস্তল দিয়ে মাথায় গুলি করে পলাশ আত্মহত্যা করেন বলে জানান তার ভাই নন্দলাল সাহা।
নন্দলাল সাহা বলেন, বিয়ের পর পলাশ মাকে তার কাছে রাখতে চাইতো। কিন্তু পলাশের স্ত্রী সুস্মিতা মাকে কখনোই তার কাছে রাখতে চাইতো না। এই নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে প্রায়ই ঝগড়াঝাটি হতো। ঘটনার দিন সকালে ঝগড়াঝাটির এক পর্যায়ে বাসা থেকে বের হয়ে অফিসে চলে যায়। এরপর আমরা পলাশের আত্মহত্যার খবর শুনতে পাই।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে পলাশের মা আরতি সাহা বলেন, ঘটনার দিন সকালে পলাশের স্ত্রী সুস্মিতা প্রথমে আমাকে ও পড়ে আমার ছেলে পলাশকে মারধর করে। এরপর পলাশ তার স্ত্রীর ওপর অভিমান করে অফিসে চলে যায়। সুস্মিতার জন্যই আমার পলাশ আত্মহত্যা করেছে। আমি ওর শাস্তি চাই।
এদিকে পলাশ সাহার লাশের পাশ থেকে র্যাব কর্মকর্তারা একটি চিরকুট উদ্ধার করেছেন। ওই চিরকুটে লেখা রয়েছে, ‘আমার মৃত্যুর জন্য মা ও বউ কেউ দায়ী না। আমিই দায়ী। কাউকে ভালো রাখতে পারলাম না। বউ যেন সব স্বর্ণ নিয়ে যায় এবং ভালো থাকে। মায়ের দায়িত্ব দুই ভাইয়ের ওপর। তারা যেন মাকে ভালো রাখে। স্বর্ণ বাদে যা আছে তা মায়ের জন্য। দিদি যেন কো-অর্ডিনেট করে।’
পলাশের বড় ভাই লিটন সাহা বলেন, পলাশ ছিল খুবই মেধাবী। সে কোটালীপাড়া পাবলিক ইউনিয়ন ইনস্টিটিউশন থেকে এসএসসি ও শেখ লুৎফর রহমান আদর্শ সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকায় যায় উচ্চ শিক্ষার জন্য। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হলেও পরের বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়। স্নাতকোত্তর শেষ করে সাব রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগ দেয় কর্মজীবনে। আরও ভালো কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার জন্য একের পর এক চাকরির পরীক্ষা দেয়। যেখানেই পরীক্ষা দেয় সেখানেই চাকরি হয়। একে একে পুলিশের এসআই, আনসারের সহকারি পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারি পরিচালক, ৩৬তম বিসিএসএ শিক্ষা ক্যাডারে চাকরি পেলেও কোনটায় যোগ না দিয়ে ৩৭তম বিসিএসএ পুলিশ ক্যাডারের এএসপি হিসেবে চাকরি হলে সাব রেজিস্ট্রারের চাকরি ছেড়ে পুলিশে যোগ দেয়।
পলাশ সাহার প্রতিবেশী জামাল শেখ বলেন, পলাশ সাহার এমন মৃত্যু মেনে নিতে পারছি না আমরা। পলাশের মতো নিরীহ ও মেধাবী ছেলে এই গ্রামে ছিল না। তার এভাবে চলে যাওয়ায় আমরা এলাকাবাসী খুবই শোকাহত।