শারীরিক প্রতিবন্ধকতা জয় করে আত্মনির্ভরশীল রবিউল

জন্ম থেকেই শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী রবিউল ইসলাম (২৯)। উচ্চতা মাত্র ৩৯ ইঞ্চি। তবুও দমে যাননি। পরিবার ও সমাজের বোঝা না হয়ে নিজ উদ্যোগে শুরু করেছেন সেলুন ব্যবসা। সেখান থেকেই যা আয় হয়, তা দিয়েই চালাচ্ছেন পুরো সংসার। দেখাশোনা করছেন বাবা-মা ও ছোট ভাইয়ের। জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার জিন্দারপুর ইউনিয়নের মহিরুম গ্রামের এই তরুণ এখন অন্য প্রতিবন্ধীদের জন্য এক অনুপ্রেরণার নাম।
স্থানীয়রা জানান, ছেলেবেলা থেকেই শরীরের স্বাভাবিক গঠন না থাকলেও রবিউলের মনোবল ছিল অটুট। নিজের সদিচ্ছা ও সাহসিকতায় আজ তিনি একজন আত্মনির্ভরশীল ব্যক্তি। স্থানীয় বাজারে একটি ছোট টিনের ঘরে গড়ে তুলেছেন সেলুন ব্যবসা। মাসে আয় হয় ৯ থেকে ১১ হাজার টাকা। এই আয় দিয়েই চলছে পরিবারের চার সদস্যের সংসার। ছোট ভাইকেও পড়াশোনার খরচ যোগাচ্ছেন তিনি।
রবিউলের প্রতিবেশী জাকারিয়া হোসেন বলেন, রবিউল কারও কাছে সহযোগিতা চান না। নিজেই আয় করেন, নিজেই সংসার চালান। আমাদের গ্রামের একজন গর্ব।
অন্য আরেক প্রতিবেশী শামীম হোসেন বলেন, তিনি প্রতিবন্ধী হয়েও কর্মঠ। তার মতো আত্মমর্যাদাশীল লোক সমাজে খুব কম দেখা যায়।
রবিউলের বাবা সাইফুল ইসলাম বলেন, ছেলে প্রতিবন্ধী হলেও কাজ করে সংসার চালায়। আমরা যতটা পারি তাকে সহযোগিতা করি। কিন্তু আয়টা খুব সীমিত। সরকারি সহায়তা পেলে হয়তো ব্যবসাটা বড় করতে পারত।
সেলুনে চুল কাটাতে আসা পাশের গ্রামের একজন বলেন, রবিউল নিজের পরিশ্রমে জীবন চালাচ্ছে। তাকে দেখে বোঝা যায়, ইচ্ছাশক্তি থাকলে অসম্ভব বলে কিছু নেই।
নিজের জীবনের গল্প বলতে গিয়ে রবিউল বলেন, আমি জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী। আমার উচ্চতা মাত্র ৩৯ ইঞ্চি। চাইলেই সব কিছু করতে পারি না। কিন্তু তারপরও আমি বসে থাকিনি। চেষ্টা করেছি কিছু একটা করার। অবশেষে বেছে নিয়েছি সেলুন ব্যবসা। ব্যবসাটা বড়সড় না হলেও কোনোরকমে সংসার চলছে এই ব্যবসা করে। মস্তসার মোড়ে আমার সেলুনের দোকান। মাসে আয় হয় ৯ হাজার থেকে ১১ হাজার টাকা। এই আয় দিয়েই নিজের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি পরিবারের ভরণ-পোষণও করছি।
রবিউল আরও বলেন, সরকারের কাছে আমার একটাই চাওয়া, আমার এই টিনের সেলুন ঘরটি যদি পাকাঘর করে দেওয়া হয়, তাহলে আমি আরও ভালোভাবে এই ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারব। ব্যবসাটাকে আরও উন্নত করতে পারব। এতে আমার পরিবারের জীবনযাপনও আরও স্বচ্ছল হবে।

কালাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শামীমা আক্তার জাহান বলেন, একজন প্রতিবন্ধী ব্যক্তি হয়েও রবিউল ইসলাম নিজের চেষ্টা আর উদ্যমে তার পরিবারের জন্য উপার্জন করছেন, এটা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তিনি শুধু নিজেই স্বাবলম্বী হননি, বরং নিজের ছোট ভাইকে শিক্ষিত করতেও ভূমিকা রেখেছেন। এটি আমাদের সমাজের অন্যান্য মানুষের জন্য এক অনন্য অনুপ্রেরণা। আমরা এই ধরনের উদ্যোগী ও সংগ্রামী মানুষদের দেখে শিখতে পারি কীভাবে নিজের যোগ্যতাকে কাজে লাগিয়ে এবং মনের শক্তিকে সামনে রেখে এগিয়ে যেতে হয়। ওনার কাজে হয়তো কিছু সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে। আমরা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চেষ্টা করব রবিউলকে যথাসম্ভব সাহায্য করতে, যাতে তার এই পথচলা আরও সহজ হয়।