সাভারে রাজউকের অভিযানে গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো রেলিক সিটি

অবশেষে সাভারের অবৈধ রেলিক সিটিতে অভিযান চালিয়েছে রাজউক। গুঁড়িয়ে দিয়েছে অবৈধ স্থাপনা ও বিলবোর্ড। প্রতিষ্ঠানটির এক পরিচালককে ১০ লাখ টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
বৃহস্পতিবার (২২ মে) দুপুরে সাভারের বিরুলিয়ায় রেলিক সিটিতে অভিযান চালায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। অভিযানে নেতৃত্ব দেন রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. লিটন সরকার।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জানান, কোনো ধরনের বৈধতা না থাকায় এলাকাবাসীর অভিযোগের ভিত্তিতে এ অভিযান চালানো হয়। এ সময় অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানটির এক পরিচালকও এই আবাসন প্রতিষ্ঠানের বৈধতা না থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন।
এদিকে রাজউকের এমন অভিযানে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। সামান্য জায়গা কিনে ৮ হাজার ২৫১ বিঘা আয়তনের মেগাসিটির নকশা তৈরি করে প্রতারণা করে আসছিল আবাসন প্রতিষ্ঠানটি।
চটকদার বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতাদের ধোঁকা দিয়ে প্রতারণার বিষয়টি এলাকাবাসী রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গোচরে আনার পর চালানো হয় এই অভিযান।
সাভারের বিরুলিয়া ও বনগাঁও ইউনিয়নে অবস্থিত আবাসন প্রকল্প রেলিক সিটিকে দ্রুত সাইনবোর্ড অপসারণ ও বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধসহ সব ধরনের অবৈধ কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিয়ে নোটিশ দিয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। এর আগে গত ৫ মে রাজউকের নগর-পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন শাখা থেকে নোটিশ পাঠানো হয় রেলিক সিটিকে।
এতে বলা হয়, আগামী ৭ দিনের মধ্যে ভরাটকৃত অংশের বালু অথবা মাটি অপসারণ করে গৃহীত পদক্ষেপ যথাযথ কর্তৃপক্ষকে না জানালে প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন ও বেসরকারি আবাসিক প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন বিধিমালা অনুযায়ী রেলিক সিটির বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের কমলাপুর, রাজারবাগসহ অন্তত ১০ গ্রামের সাধারণ মানুষ নিজেদের বাপ দাদার পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে চরম আতঙ্কে ছিল। ‘রেলিক সিটি’গ্রামের ফসলি জমি, বসতভিটা, মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুলসহ ধর্মীয় ও সামাজিক স্থাপনাগুলো জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা করে। প্রতিবাদে গত ২১ এপ্রিল গ্রামবাসী শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করেন রেলিক সিটির ভূমিদস্যুতার বিরুদ্ধে। এর জেরে পাল্টা হামলা, হুমকির মুখে পড়তে হয় গ্রামবাসীকে।
মানববন্ধনের সময় ভিডিও ধারণ করায় স্থানীয় যুবক সালাউদ্দিনের ওপর প্রকাশ্যে হামলা চালানো হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রেলিক সিটির চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজের নির্দেশে হামলা করা হয়। পরবর্তীতে সাংবাদিকদের সামনেই সালাউদ্দিনকে চাঁদাবাজ হিসেবে অপমান করা হয় এবং আরও একবার হামলা চালিয়ে গুরুতর আহত করা হয়। বর্তমানে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
গ্রামবাসী জানান, তাদের ভয় দেখিয়ে ও মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে গ্রাম ছাড়তে বাধ্য করার চক্রান্তের অংশ হিসেবে ভাড়াটে মাস্তানদের পাঠানো হয় গ্ৰামগুলোতে।
ইতোমধ্যে নবাব স্টেটের জমি, বনবিভাগ, সরকারি খাসজমি ও জলাভূমি ভরাট করে অন্তত ৩০০ কৃষকের ফসলি জমি ধ্বংস করে রেলিক সিটি।
রাজউকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. লিটন সরকার জানান, কুমারন, রাজারবাগ, কমলাপুর, সাধাপুর, চাকুলিয়া, চান্দপাড়া, রাজাসন, নিকরাইল, গান্ধারিয়া, বিলঘাবিল মৌজার প্রায় ৮ হাজার ২৭১ বিঘা জমিতে রেলিক সিটি লেআউট প্রণয়ন করে। ম্যাপ, স্যাটেলাইট ইমেজ ও সরেজমিন পরিদর্শন শেষে বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এই জমিগুলো সাধারণ জলস্রোত ও কৃষি জমি এলাকা হিসেবে ড্যাপে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। রাজউকের অনুমোদন ছাড়া প্রস্তাবিত রেলিক সিটির প্রণীত লেআউট প্রণয়ন, সাইনবোর্ড স্থাপন আইন পরিপন্থি কাজ; যা রিয়েল এস্টেট উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ এর ধারা ৫, ১৯ ও ২০ এবং বেসরকারি আবাসিক প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন বিধিমালা, ২০০৪ এর ১৬(৩) এর সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন।
মো. লিটন সরকার জানান, ৮ হাজার ২৫১ বিঘার মেগাসিটির নকশা অথচ, এক শতাংশ জমিও রেলিক সিটির নামে নামজারি নেই।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে রেলিক সিটির চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ এনটিভিকে বলেন, ৬ বিঘা জমির বৈধ কাগজ আছে। হাউজিংয়ের অনুমোদনের প্রক্রিয়া চলছে। দশটি মৌজার নকশা থাকলেও বর্তমানে মাত্র দুটি মৌজায় সীমিত জমি কেনা হয়েছে।
তার আগেই রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করায় হাউজিং প্রতিষ্ঠানটি আস্থার সংকটের মুখে পড়বে বলে দাবি করেন রেলিক সিটির চেয়ারম্যান।