অর্থবহ সংস্কারের মাধ্যমে অর্থবহ নির্বাচন চায় জামায়াত
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, অর্থবহ সংস্কারের মাধ্যমে একটি অর্থবহ নির্বাচন চায় জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ।
আজ শনিবার (২৪ মে) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর প্রতিনিধিদলের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
জামায়াতের আমির বলেন, আমরা বিশ্বাস করি সব দলই দেশকে ভালোবাসে। ভালোবাসার জায়গা থেকে, দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে আমরা সবাই যদি এগিয়ে আসি এবং আমরা যদি সংস্কার প্রক্রিয়াকে অর্থবহ সহযোগিতা করি, তাহলে একটা অর্থবহ সংস্কারের মধ্যদিয়ে একটি অর্থবহ নির্বাচন নিশ্চিত হতে পারে। আমরা সেই দিনটার অপেক্ষায় আছি।
এর আগে রাত সাড়ে ৮টার দিকে তারা রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রবেশ করেন। প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্য হলেন নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
শফিকুর রহমান বলেন, গত কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশে কিছুটা অস্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছিল। তারই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা পরিষেদের একটা বৈঠক হয়। সেই বৈঠক থেকে প্রধান উপদেষ্টা একটা ম্যাসেজ জাতিকে দিতে চেয়েছিলেন। তিনি সেটা দেননি। কিন্তু এই কথাটা সমাজের সব দিকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। যার কারণে সমাজে একটা অনিশ্চয়তা, আশঙ্কা, আতঙ্ক দেখা দেয়। আমরা সেদিনই বিষয়গুলো হিসেবে নিয়েছি।
তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লবের মধ্যদিয়ে দেশে একটা পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু এই পরিবর্তনে এখন যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন সরকারে, তাদের পরিচয় হচ্ছে যে তারা কোনো পার্টিকে বিলং করবেন না। এটা হওয়া উচিত। কিন্তু এখানেও কিছু ব্যতিক্রম ঘটেছে। এটাও মাঝেমধ্যে সমাজকে উদ্বিগ্ন করেছে। আবার স্বাভাবিকভাবেই এই পরিবর্তন বা বিপ্লবের অবশ্যম্ভাবী দাবি ছিল, অর্থবহ কিছু সংস্কার করা লাগবে এবং যারা অপরাধী তাদের বিচার হওয়া লাগবে। এ সংস্কার এবং বিচারের মধ্যদিয়েই একটা অর্থবহ নির্বাচন হবে। এই নির্বাচনে সমতল মাঠ থাকবে। নির্বাচনে যারা অংশগ্রহণ করবেন তাদেরকে কোনো ধরনের ষড়যন্ত্রের মুখোমুখি হতে হবে না। এখানে পেশীশক্তি ও কালো টাকার প্রভাব চলবে না।
নির্বাচনের সময় নিয়ে শফিকুর রহমান বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ইতিমধ্যে কয়েকবার বলেছেন, নির্বাচন তিনি দিতে চান এই বছরের ডিসেম্বর থেকে শুরু করে আগামী বছরের জুনের মধ্যবর্তী কোনো এক সময়ে। কিন্তু তিনি সুনির্দিষ্ট কোনো রোডম্যাপ দেননি। কোনো মাস, সপ্তাহ তিনি ঘোষণা করেননি।
জামায়াতের আমির বলেন, আমরা বলেছি দুইটা বিষয় স্পষ্ট করা দরকার। একটা হলো নির্বাচনটা কখন হবে। দ্বিতীয়টা হলো নির্বাচনের আগে অবশ্যই সংস্কার এবং দৃশ্যমান বিচারের কিছু প্রক্রিয়া জনগণের সামনে আসতে হবে। সংস্কার শেষ না করে যদি নির্বাচন হয়, সেই নির্বাচনে জনগণ তাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে না। আবার সব সংস্কার এই সরকারের পক্ষে করা সম্ভবও না। মাত্র পাঁচটা সুনির্দিষ্ট বিষয়ে তারা হাত দিয়েছেন। এতটুকুর নিষ্পত্তি হওয়া উচিত সন্তোষজনকভাবে।
সমাজে সৃষ্ট অস্থিরতার বিষয়ে তিনি বলেন, দুইটা রোডম্যাপ ঘোষণা করলেই তার অনেকটাই সমাধান হয়ে যাবে। একটা হচ্ছে সংস্কারের রোডম্যাপ, আরেকটা হচ্ছে নির্বাচনের রোডম্যাপ।
নির্বাচনের জন্য কোনো সময় বেঁধে দিয়েছেন কিনা— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা কোনো সময় বেঁধে দিইনি। আমরা দুইটা সময় আপনাদের মাধ্যমেই জাতিকে জানিয়েছি। যদি সংস্কার শেষ হয়ে যায় তাহলে ফেব্রুয়ারি মধ্যভাগেই হতে পারে। আর যদি সংস্কারের জন্য আরেকটু সময় লাগে, এরপরই যেহেতু রোজা শুরু, রোজার পরপরই হতে হবে। তারপর এটাকে টেনে লম্বা করলে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে না, আমাদের দেশের আবহাওয়া এটা এলাও করবে না।
তিনজন উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করেছে বিএনপি— এ বিষয়ে শফিকুর রহমান বলেন, আমরা কারও পদত্যাগ চাইনি।