চিকিৎসক-নার্সদের কর্মবিরতিতে ‘জুলাই আহতদের’ হামলা

রাজধানীর জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে কর্মবিরতিতে থাকা চিকিৎসক-নার্সদের ওপর রোগীদের স্বজন ও জুলাই আহতরা হামলা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আজ বুধবার (২৮ মে) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালে এই ঘটনা ঘটে।
এ সময় হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের সঙ্গে সেনাবাহিনী মাঠে নেমেছে।
হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৬ মে চিকিৎসা নিরাপত্তাসহ একাধিক দাবি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আহত চারজন রোগী হাসপাতালে বিষপান করে। এটিকে কেন্দ্র করে ওই দিন হাসপাতালের পরিচালক, চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা, গায়ে হাত তোলা ও ভাঙচুরের মতো ঘটনা ঘটে। পরিচালকের কক্ষে পেট্রোল ঢেলে আগুন দেওয়ারও চেষ্টা করেন জুলাই আহতরা।
এ ঘটনার প্রতিবাদে হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আজ সকাল থেকে কর্মবিরতি শুরু করেন। এতে হাসপাতালে আসা রোগীরা পড়েন বিপাকে। শিডিউল অনুযায়ী অস্ত্রোপচার করার কথা থাকলেও হয়নি। আউটডোরে লাইন থাকলেও টিকিট দেওয়ার লোক ছিল না। শুধু জরুরি বিভাগ খোলা ছিল।
আব্দুল হাই নামের একজনের অস্ত্রোপচারের তারিখ ছিল আজ। তার স্বজনদের হাসপাতালে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। এরই মধ্যে সকাল থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগি ও তাদের স্বজনদের হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা, ধাক্কাধাক্কি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে পুরো হাসপাতাল জুড়ে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে।
হাসপাতালে অবস্থান করা জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত রোগীরাও এতে যোগ দেন। তারা বাঁশ-লাঠি নিয়ে আন্দোলনরতদের ওপর চড়াও হয়। মারধর শুরু করেন। এতে চিকিৎসকসহ একাধিক হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারি আহত হন। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেন পাশে থাকা জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানে (নিটোর) জুলাই আহতরাও। এত পুরো হাসপাতাল জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের দখলে চলে যায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত চক্ষু হাসপাতালের কর্মকর্তা মিজানকে বের করে আনছিলেন কয়েকজন। মাথা থেকে অঝোরে রক্ত ঝরা অবস্থায় তাকে নিয়ে আসা কয়েকজন বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহতরা মিজানকে আঘাত করেছে। মিজানের মতো আরো কয়েকজন ভেতরে আহত হয়েছেন।
এসময় চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও সেবাপ্রার্থী সবাইকেই হাসপাতাল থেকে দৌড়ে বের হয়ে যেতে দেখা যায়। শহীদুল ইসলাম নামের একজন সহযোগী অধ্যাপক চিকিৎসকের ওপরও হামলা করে জুলাই আহতরা। এ ছাড়া হামলার শিকার হন ডা. জাহিদ, ডা. আরাফাত, ডা. তিষাদুরসহ কয়েকজন। হামলায় হাসপাতালের বেশ কয়েকজন কর্মীও আহত হয়েছেন।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত একাদিক জন বলেন, ‘মূলত কয়েকদিন যাবতই ঝামেলা চলছে। আমাদের কয়েকজন বিষ খেয়েছে। একজন হারপিক খেয়েছে। এসব বিষয়ে আলোচনা করতে গতকাল (মঙ্গলবার) পরিচালকের রুমে যাই। সেখানে বাগবিতণ্ডা হয়। পরে সেনাবাহিনী এসে পরিচালককে উদ্ধার করে।’ তারা আরও বলেন ‘আজ সকাল থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মবিরতি পালন করেন। সেখান থেকে আমাদের ওপর হামলা করবে বলে শুনতে পারি। পরে আবার আমাদের ওয়ার্ডের কলাপসিবল গেটে তালা দেয়। আমরা তালা ভেঙে বের হইছি। গ্যাঞ্জাম হয়েছে। এখন সেনাবাহিনী আসছে।’
চিকিৎসকরা জানান, চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কর্মবিরতির ফলে ভোগান্তিতে পড়া সেবাপ্রার্থীদের সঙ্গে হাসপাতালের কর্মীদের তর্কবিতর্ক ও হাতাহাতি হয়েছে। এতে পরিস্থিতি একটু উত্তপ্ত হয়। তখন ভেতরের রোগীদের নিরাপত্তার স্বার্থে সব ওয়ার্ডের কলাপসিবল গেট লাগিয়ে দেওয়া হয়। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আহতদের ওয়ার্ডে একইভাবে তালা দেওয়া হয়। তারা বিষয়টিতে ভুল বুঝে তালা ভেঙে এসে চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সেবাপ্রার্থীদের গণপিটুনি শুরু করেন। তাদের সঙ্গে এসে যোগ দেন পঙ্গু হাসপাতালের জুলাই আহতরা।
এরপরই হাসপাতালের সব সেবা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিকেল ৪টায়ও শুরু হয়নি সেবা কার্যক্রম। এমনকি হাসপাতালের প্রধান গেটও বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরী বলেন, গতকালের একটি অনভিপ্রেত ঘটনায় স্টাফরা কর্মবিরতিতে গেছেন। কর্মবিরতি চলার সময় তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। আমি ছুটিতে আছি। আমার পরিবর্তে অন্য একজন দায়িত্ব পালন করছেন।
হামলা প্রসঙ্গে শেরে-বাংলা নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইমাউল হক বলেন, এই মুহূর্তে চক্ষু বিজ্ঞান হাসপাতালের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত হয়েছেন চিকিৎসক-নার্সরা। আহত শিক্ষার্থীরা হাসপাতালেই রয়েছেন।