‘মাংস রান্না হলে ছেলেমেয়ে খাবে, এটাই আমার ঈদ’

কুমিল্লা ইপিজেডে চাকরি করেন আবদুস সাত্তার। মাস শেষে বেতন পান ২০ হাজার। ঘর ভাড়া ও ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ বাদ দিলে ভালো কিছু খাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। গরুর মাংস খাওয়া তো বিলাসিতা। আবদুস সাত্তার বলেন, অবুঝ ছেলেমেয়ে দুটো সকাল থেকে বলছিল আজ ঈদের দিন। গরুর গোশত দিয়ে ভাত খাবে। পায়ে হেঁটে অফিস করে, চা পান না করে দু হাজার টাকা বাঁচিয়েছি। এই টাকা দিয়ে এই ভ্রাম্যমাণ গোশতের হাট থেকে মাংস কিনেছি। এখানে বাজার দর থেকে কিছুটা কমে চার কেজির মতো মাংস কিনেছি। এখন বাড়ি যাব। বউকে বলেছি রান্নার আয়োজন করতে। মাংস রান্না হলে ছেলেমেয়ে খাবে, এটাই আমার ঈদ।
কুমিল্লার প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড়। বছরে একবার ভ্রম্যমাণ হাট বসে। পাওয়া যায় কোরবানির গোশত। পশু কোরবানির পর যারা নিজেদের বাসা-বাড়ি থেকে অতিরিক্ত মাংস সংগ্রহ করেন, তার কিছুটা নিজেদের জন্য রেখে বাকিটা এই হাটে বিক্রি করতে আসেন। আর যারা কোরবানি দিতে পারেন না বা কম দামে মাংস কেনার আশায় থাকেন, তারাই হন এই হাটের ক্রেতা। এটি যেন এক অদ্ভুত সমীকরণ, যেখানে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো ঈদের দিনে নিজেদের সাধ্যমতো মাংস কেনার সুযোগ পান। এখান থেকেই মাংস কিনেছেন আবদুস সাত্তার।
আবদুস সাত্তারের মতো অনেকেই এই হাটে মাংস কিনতে এসেছেন। নির্মাণ শ্রমিক মো. সোহেল শাকতলা থেকে এসেছেন। তার হাতে একটি ব্যাগ, দেড় হাজার টাকায় আড়াই কেজির মতো মাংস কিনেছেন। দুপুর থেকে অপেক্ষা করছিলেন কোরবানির কাজ শেষ হওয়ার জন্য।
শনিবার (৭ জুন) বিকেল ৩টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কান্দিরপাড়ে যানজট না থাকলেও গোশতের হাটের জন্য জটলা হয়ে আছে। এই হাটের ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই নিম্ন আয়ের মানুষ। পূবালী ব্যাংকের সিঁড়ির সামনে মূলত হাটটি বসে, তারপর ধীরে ধীরে হাটের পরিধি বাড়তে থাকে। তবে এ বছর ভ্রাম্যমাণ এই গোশতের হাট বসেছে নগরীর কান্দিরপাড়, ঝাউতলা, পুলিশ লাইন ও পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড এলাকায়।
এই হাটে মাংস বিক্রি করতে এসেছেন সোবহান মিয়া, যিনি বাসা-বাড়িতে রঙের কাজ করেন। থাকেন শহরতলীর ধর্মপুরে। আজ ঈদের দিন। তাই কাজ নেই। সকালে নামাজ আদায় করে বাড়িতে ছেলেমেয়ে নিয়ে ডিম তরকারি দিয়ে ভাত খেয়েছেন। দুপুর হলে ব্যাগ হাতে বের হয়ে যান। আশপাশের এলাকায় ঘুরে অন্তত ছয় কেজি মাংস পেয়েছেন। বাড়িতে তিন কেজির মতো মাংস রেখে বাকিটা কান্দিরপাড় হাটে এনে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। এই টাকা দিয়ে তেল, পেঁয়াজ, লবণ ও কিছু মসলা কিনবেন বলে বাড়ির পথে পা বাড়ান।
তবে এ বছর হাটে ক্রেতাদের অভিযোগ, বেশি লাভের আশায় হোটেল মালিকরা বাড়তি দাম দিয়ে হাটের মাংস কিনে নিয়ে যান। ফলে যারা নিম্ন আয়ের মানুষজন হাটে মাংস কিনতে এসেছেন, দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদের অনেকে পরিমাণমতো মাংস কিনতে পারেননি।
এদিকে, বেশ কয়েকজন ভাতের হোটেলের মালিক নাম না প্রকাশ করার শর্তে জানান, বাজার থেকে মাংস কিনলে কসাইরা প্রতি কেজিতে আড়াইশ থেকে তিনশ গ্রাম হাড্ডি দেয়। এ ছাড়া মাংসের চর্বিও থাকে অনেক। যারা হোটেলে খেতে আসেন, তারা শুধু মাংস চায়। এতে রান্না করা মাংস বিক্রি করে তেমন মুনাফা করা সম্ভব হয় না। এই জন্য কম দামে মাংস কিনতে তারা এই হাটে আসেন।