সাভার চামড়া শিল্পনগরী
দাম নিয়ে হতাশ মৌসুমি ব্যবসায়ীরা

সাভারে চামড়া শিল্পনগরীতে আসতে শুরু করেছে কোরবানির পশুর কাঁচা চামড়া। আজ রোববার (৮ জুন) দুপুর থেকেই ঢাকা ও আশপাশের এলাকা থেকে পশুর চামড়াবোঝাই ট্রাক ট্যানারিতে নিয়ে আসছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।
তবে সরকার নির্ধারিত দাম পাচ্ছেন না তারা। সিন্ডিকেটের কারণে কম দামেই চামড়া বিক্রি করতে হচ্ছে।
কাঁচা চামড়ার মূল্যপতন ঠেকাতে সরকার চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্ত নিলেও তার সুফল পাচ্ছে না মৌসুমি ব্যবসায়ীসহ চামড়া সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত বিভিন্ন মাদ্রাসা ও এতিমখানা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
না প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মাদ্রাসার শিক্ষক বলেন, গতকাল রাতে বিভিন্ন স্থান থেকে চামড়া সংগ্রহ করে ভালো মূল্য পাওয়ার আশায় শিল্পনগরীতে আনার পর সিন্ডিকেটের শিকার হন।
সরকার ঢাকায় সর্বনিম্ন কাঁচা চামড়ার দাম এক হাজার ৩৫০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে সর্বনিম্ন দাম এক হাজার ১৫০ টাকা নির্ধারণ করলেও এর ধারে কাছেও দাম পাননি তারা।
মিরপুর থেকে আসা মাদ্রাসা শিক্ষক মাওলানা কাসেম হোসাইনী বলেন, ‘বড় পশুর চামড়া বিনিময়ে তাদের ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা দিতে হয়েছে। সংরক্ষণের অভাবে চামড়া নষ্ট হয়ে যেতে পারে এই আশঙ্কা থেকে আমরা বাধ্য হয়ে বিক্রি করে দিচ্ছি।’
রাজধানীর রায়ের বাজার থেকে আসা হোসেন মিয়া নামের এক মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী জানান, সরকারের বেঁধে দেওয়া দর মাথায় রেখে তারা চামড়া সংগ্রহ করেছিলেন। তবে বিক্রি করতে এসে এখন তাদের মাথায় হাত। বিপুল অঙ্কের অর্থের লোকসান দিয়ে তাদের ফিরতে হয়েছে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে, এ বছর কোরবানির পশুর চাহিদা ছিল প্রায় এক কোটি ৩ লাখ ৮০ হাজার। সেখানে গরু-ছাগলসহ কোরবানির জন্য প্রস্তুত ছিল প্রায় এক কোটি ২৪ লাখ ৪৭ হাজার পশু। চলতি বছর কোরবানির ঈদের মৌসুমে ৮০ থেকে ৮৫ লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেন ট্যানারি মালিকরা।
সাভারের আমিনবাজার, হেমায়েতপুরের অস্থায়ী আড়তগুলোতেও কাঁচা চামড়ার বেচাকেনায় দেখা গেছে মূল্যের হেরফের।
সংগৃহীত এসব চামড়ার মূল গন্তব্য যেখানে চামড়া শিল্প নগরী সেখানে মূল্যের পতনের পর স্বাভাবিকভাবেই দর পড়ে গেছে অস্থায়ী এসব আড়তে। রোববার সকাল থেকেই রিকশা, ভ্যান ও ট্রাকে করে মৌসুমি ব্যবসায়ী ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা চামড়া নিয়ে আসছে। আড়তদাররা দরদাম করে চামড়া কিনছে।
আড়তদার ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেন, একেকটি গরুর চামড়া ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় কিনছেন। মাঝারি আকারের গরু কোরবানি হয় বেশি। সেই চামড়া তাঁরা কিনছেন সর্বোচ্চ ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকায়।
এ সময় চামড়া শিল্পনগরীর বিভিন্ন কারখানার কর্মকর্তাদের আনাগোনা ছিল লক্ষণীয়।
বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, এ বছর সার্বিকভাবে চামড়ার সরবরাহ ভালো। চলতি বছর ট্যানারি প্রতিষ্ঠানগুলো পাঁচ থেকে ছয় লাখ কাঁচা চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়েছে। মূলত কাঁচা চামড়ার দাম স্থিতিশীল রাখতে ট্যানারি প্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি কাঁচা চামড়া কিনছে।
নাজমুল হুদা নামের একজন ট্যানারির প্রতিনিধি বলেন, চামড়া প্রতি প্রক্রিয়াজাত করতে লবণ ও শ্রমিকের মজুরি বাবদ খরচ পড়ে যাবে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা। তাই সরকারের আগাম নেওয়া নানা উদ্যোগ সত্ত্বেও বাজার মন্দা। যে কারণে সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া কিনছেন না বরং যেখানে কম পাচ্ছেন সেখানেই থেকেই চামড়া সংগ্রহ করছেন। কমে কিনছেন।
এদিকে চামড়াবাহী যানবাহন যাতে নির্বিঘ্নে শিল্প নগরীতে প্রবেশ করতে পারে, সেটি নিশ্চিত করতে তৎপর দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলার রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের।