বেহাল রাস্তা যেন নওগাঁর চুনিয়াগাড়ির গলার কাঁটা

নওগাঁ সদর উপজেলার চুনিয়াগাড়ি গ্রাম একটি বড় ও সম্ভাবনাময় এলাকা। এখানে রয়েছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও একটি মাদ্রাসা। তবে গ্রামের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে যোগাযোগব্যবস্থা। তিনটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ রাস্তার বেহাল দশা জনজীবনে চরম দুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে।
চন্ডিপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত চুনিয়াগাড়ি গ্রামটি কয়েকটি অংশে বিভক্ত। ছোট চুনিয়াগাড়ি থেকে বড় চুনিয়াগাড়ি পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার মাটির রাস্তা বর্ষা মৌসুমে চলাচলের একেবারে অনুপযোগী হয়ে পড়ে। রাস্তার গর্তে পানি জমে গেলে বোঝাই যায় না কোথায় রাস্তা, কোথায় জমি। ছোট ছোট বাহন চলতে চায় না, ফলে কৃষিপণ্য বাজারে নিতে গিয়ে বিপাকে পড়েন কৃষকরা।
শুধু কৃষক নয়, ছোট শিক্ষার্থীরাও এই কষ্ট থেকে বাদ যায় না। স্কুলে যাওয়ার পথে কাঁদায় পড়ে যায়, পোশাক নষ্ট হয়, কেউ কেউ কান্নায় ভেঙে পড়ে। এছাড়া বটতলী থেকে বিশ্ববাঁধ পর্যন্ত প্রায় আধা কিলোমিটার রাস্তার ইট উঠে গিয়ে বিশাল গর্ত তৈরি হয়েছে। এই গর্তে পড়ে যানবাহন উল্টে যাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। রাস্তার অবস্থা এতটাই খারাপ যে গ্রামের পোলট্রি খামারগুলোতেও মুরগি কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে, কারণ ব্যবসায়ীরা এই রাস্তায় পণ্য নিতে আসে না।
আরেকটি রাস্তাও, তালতলি থেকে বিশ্ববাঁধ পর্যন্ত, একই রকম খারাপ। বর্ষাকালে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যেতে চায় না, শিক্ষকরা যোগদান করেও অন্যত্র চলে যান। গ্রামের তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উন্নয়ন এভাবেই ব্যাহত হচ্ছে।
গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মতিন ও ফায়জুল বারি বলেন, গ্রামে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ স্থায়ীভাবে বাস করেন। এই রাস্তা উন্নয়ন না হলে পুরো গ্রাম উন্নয়ন থেকে পিছিয়ে থাকবে। তারা মনে করেন, গ্রামের কৃষককে উন্নত করতে হলে প্রথমে যোগাযোগব্যবস্থা ঠিক করতে হবে।
শিক্ষক আলমগীর বাবু বলেন, রাস্তার কারণে ছেলে-মেয়েদের বিয়ের প্রস্তাবও আসছে না। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কমে যাচ্ছে। কৃষকেরা উৎপাদন করেও ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না।
ময়েন উদ্দিন বলেন, বিগত সরকার কিছুই করেনি। স্থানীয় চেয়ারম্যান-মেম্বাররা শুধু বরাদ্দ নিয়ে নিজেদের কাজ করেছে, গ্রামের রাস্তা থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখেছে।
নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. ইবনুল আবেদীন জানান, গ্রামীণ জীবনমানে সার্বিক পরিবর্তন আনতে হলে গ্রামীণ চলাচলের রাস্তার আধুনিকায়নের কোনো বিকল্প নেই। তাই দ্রুতই ওই গ্রামের রাস্তাগুলো পরিদর্শন করে আধুনিকায়নের জন্য যাবতীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।