দীঘিনালায় ৬ বছরেও শেষ হয়নি ৫০ শয্যার হাসপাতাল ভবনের কাজ

খাগড়াছড়ি জেলার শতবর্ষী দীঘিনালা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রায় সোয়ালাখ মানুষের চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয় মাত্র ১০ শয্যার একটি ভবন থেকে। ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে এটিকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করার পরিকল্পনা নেয় সরকার। কাজের দায়িত্ব পায় ‘মেক কন্সস্ট্রাকশন’ নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। মেয়াদ ধরা হয় ১৮ মাস। কিন্তু ছয় বছরেও কাজের অগ্রগতি মাত্র ৮৯ শতাংশ, তাও ১০ বার মেয়াদ বাড়ানোর পর।
এখনও পুরোনো জরাজীর্ণ টিনশেড ভবনে নারী-পুরুষ ও শিশু ওয়ার্ড চালু রয়েছে। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, শয্যার অভাব এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের ঘাটতির কারণে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। অনেক রোগী মেঝেতেই চিকিৎসা নিতে বাধ্য হন। একটি অ্যাম্বুলেন্সে ভর করে দীঘিনালা ছাড়াও সাজেক ও লংগদুর মানুষও চিকিৎসা নিতে আসেন এখানে।
চিকিৎসক সংকট, এক্স-রে কারিগর না থাকা, জরুরি সেবার সীমাবদ্ধতাও প্রকট। উন্নত চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথে বহু রোগী সড়কেই মারা যায়।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে রয়েছে ধীরগতির অভিযোগ। কোভিড, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও আঞ্চলিক সংগঠনের চাঁদাবাজিকে অজুহাত দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানটি একাধিকবার সময় নিয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
বোয়ালখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চয়ন বিকাশ চাকমা বলেন, হাসপাতালের ভবন নির্মাণ কাজের যে অবস্থা, তা দেখে মনে হয় কোনো আইনি জটিলতা আছে কিনা তা আমাদের বোধগম্য নয়। দীর্ঘসময় পেরিয়ে গেলেও কাজ শেষ না হওয়ায় জনগণের দুর্ভোগ বেড়েই চলেছে।

প্রকল্পটির তত্ত্বাবধায়ক একাউন্টেন্ট মো. মেহেদী হাসান জানান, নির্মাণাধীন ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রকল্প হলেও করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ ছয় মাস কাজ বন্ধ ছিল। এরপর নির্মাণ সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধিসহ বিভিন্ন জটিলতায় নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি। তবে আমরা আপাতত চেষ্টা করছি নিচতলার কাজ দ্রুত শেষ করতে, যাতে জরাজীর্ণ ভবন থেকে রোগীদের নতুন ফ্লোরে স্থানান্তর করা যায়।
খাগড়াছড়ির সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ছাবের বলেন, হাসপাতালের জরাজীর্ণ ভবনটি আমি পরিদর্শন করেছি। সত্যিই রোগীদের চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। নতুন ভবনের কাজ দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এ বিষয়ে আমি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে লিখিতভাবে জানিয়েছি। পাশাপাশি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকেও জানিয়েছি যেন দ্রুততম সময়ে কাজটি শেষ করার ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
খাগড়াছড়ি স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মো. রুবেল জানান, মেক কন্সস্ট্রাকশন নামের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আমরা ইতোমধ্যে একাধিকবার জরিমানা করেছি। তাদের বারবার তাগাদা দেওয়া হয়েছে কাজটি দ্রুত শেষ করার জন্য। তারপরও আশানুরূপ অগ্রগতি নেই। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে রেখেছি।