ভুল চিকিৎসায় নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ

গাজীপুরের শ্রীপুরে ভুল চিকিৎসা এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় এক নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে জায়েদা মাল্টিকেয়ার নামে একটি বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে। প্রসূতি মায়ের অবস্থাও সংকটাপন্ন। সিজারিয়ান অপারেশনের পরপরই হাসপাতালে কোনো চিকিৎসক এবং প্রশিক্ষিত নার্স ছিলেন না বলে জানা গেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার শফিকুল ইসলাম দায়িত্ব অবহেলা ও ভুয়া নার্স থাকার সত্যতা পেয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৪ জুন) ভোরে শ্রীপুর পৌরসভার শ্রীপুর চৌরাস্তা এলাকায় অবস্থিত জায়েদা মাল্টিকেয়ার হাসপাতালে এই ঘটনা ঘটে।
প্রসূতি মিথিলা আক্তার (২৪) শ্রীপুর পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের মো. শহিদুল ইসলামের স্ত্রী।
নবজাতকের চাচা আশিকুর রহমান বলেন, ‘গত ২২ তারিখ ভাইয়ের বউকে স্থানীয় জায়েদা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসকদের পরামর্শে ওদিন রাতেই সিজারিয়ান অপারেশন করেন গাইনী বিশেষজ্ঞ ডাক্তার শারমিন আক্তার লিজা। অপারেশনের পরপরই তিনি হাসপাতাল ত্যাগ করেন। ঘণ্টাখানেক পর শিশুর শারীরিক অবস্থা অবনতি হলে আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানাই। কিন্তু সেসময় কোনো চিকিৎসক ছিলেন না, এমনকি কোনো প্রশিক্ষিত নার্সও নেই। এরপর আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করি। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো ধরনের গুরুত্ব দেয়নি। এরপর হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমাদের একদিন পর জানায় বাচ্চা সুস্থ আছে, কোনো সমস্যা হবে না।
আশিকুর রহমান আরও বলেন, ‘কিন্তু নবজাতকের অবস্থার অবনতি হলে আমরা নবজাতককে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাই। সেখানে দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকরা জানান, দ্রুত একজন শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখানোর জন্য। পুনরায় নবজাতককে নিয়ে জায়েদা মাল্টিকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার দেখানোর অনুরোধ করি। কিন্তু তারা বিষয়টি গুরুত্ব দেয়নি। আমাদের পরামর্শ দেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় ২৪ জুন ভোররাতে নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে।’ তিনি আরও জানান, নবজাতকের মৃত্যুর খবর পেয়ে মায়ের অবস্থার অবনতি হলে তাৎক্ষণিকভাবে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। এই হাসপাতালের বিরুদ্ধে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও থানায় পৃথক দুটি লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
জায়েদা মাল্টিকেয়ার হাসপাতালের পরিচালক মেহেদী হাসান বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে, বিষয়টি সঠিক নয়। আমাদের একটা অপরাধ আছে, তা হলো সিজারিয়ান অপারেশনের পর কোনো চিকিৎসক বা নার্স ছিল না। নবজাতকের জন্মের পরপরই নবজাতক মা সুস্থ ছিল। দুদিন পর নবজাতক মারা গেছে। তাদের আস্থা না থাকায় প্রসূতি মাকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে গেছে।
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার শফিকুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে আমি ভোররাতেই জায়েদা মাল্টিকেয়ার হাসপাতালে ছুটে যাই। সেখানে গিয়ে কোনো চিকিৎসক বা নার্স পাইনি। যাদের নার্স বলা হচ্ছে, তাদের কোনো প্রশিক্ষণ বা অভিজ্ঞতা নেই। বাড়ির কাজের লোকদের অ্যাপ্রোন পরিয়ে নার্স সাজিয়ে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে।
শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, দ্রুত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করা হবে। সিভিল সার্জনের নির্দেশনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে স্থায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।