প্রধান উপদেষ্টা-সিইসির বৈঠকের বিষয় স্পষ্ট করার দাবি সালাহউদ্দিনের
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীনের বৈঠকে আলোচিত বিষয় স্পষ্ট করার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘ওই বৈঠক নিয়ে বিএনপির ধারণা, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন বিষয়ে আলোচনা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ও সিইসি। বিএনপি মনে করছে, নির্বাচন সংক্রান্ত প্রস্তুতি সেপ্টেম্বরের মধ্যেই নেওয়া সম্ভব। বৈঠকে হয়তো প্রধান উপদেষ্টা সিইসিকে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন ধরে প্রস্তুতি নিতে তার বার্তা দিয়েছেন। যদি উভয়পক্ষ থেকে জাতির সামনে বিষয়টি পরিষ্কার করা হয়, তাহলে আমরা আশস্ত হবো।’
আজ শুক্রবার (২৭ জুন) বিকেলে রাজধানীর গুলশানে সালাহউদ্দিন আহমেদ নিজ বাসায় সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কয়েকবারই বলা হয়েছে, তাদের সমস্ত প্রস্তুতি সেপ্টেম্বরের ভেতরে সমাপ্ত হয়ে যাবে। এর আগে তারা জুলাইয়ের মধ্যে সমস্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে পারবেন বলেও নির্বাচন কমিশন বলেছিল।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘যেহেতু নির্বাচনের প্রস্তুতি অনেক আগেই শুরু হয়ে গেছে এবং সব কার্যক্রম গুছিয়ে এনেছেন সেই হিসেবে বলা যায়, সেপ্টেম্বর এনাফ টাইম। নির্বাচনের জন্য যে সমস্ত জিনিস প্রয়োজন সেটা হচ্ছে ভোটার তালিকা প্রণয়ন, হালনাগাদ করা এটা হয়ে গেছে এবং অন্যান্য যে সমস্ত বিষয় আছে, নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিভিন্ন সামগ্রী ক্রয়, সেটাও তারা করে ফেলেছেন।’
সালাহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ‘আর বাদ বাকি যেটা আছে ডিলিটেশন। সেটা তিন মাসের মধ্যে সমাপ্ত করা যায়। এরপরে তফসিল ঘোষণার পরে অনেক কার্যক্রম থাকবে পোলিং অফিসার, প্রিসাইডিং অফিসার নিয়োগসহ ভোটকেন্দ্র ঠিক করা, ট্রেনিং করা এগুলো চলমান প্রক্রিয়া। এগুলোর জন্য প্রস্তুতি লাগে না।’
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দীন।
আগামী রমজানের আগে নির্বাচন অনুষ্ঠানে তারেক রহমানের প্রস্তাবের জবাবে প্রধান উপদেষ্টা জানান, জুলাই গণহত্যার বিচার ও সংস্কার সন্তোষজনক হলে ২০২৬ সালের রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও (ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি) নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে।
জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির পক্ষ থেকে সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দাবির বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচনি কৌশল হিসেবে তারা অনেক কথাই বলতে পারেন। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার সম্মত সময়ের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সব পক্ষ এবং সব রাজনৈতিক দল একমত। দ্বিমত তো হতে দেখিনি কাউকে। যদি তাই হয়, এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করা বা আয়োজন করা এক প্রকার অসম্ভব। কারণ প্রতিটি স্তরে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে গেলে কমপক্ষে ছয় মাসের বেশি সময় লাগে। সেটা ইউনিয়ন পরিষদ হোক, পৌরসভা হোক, উপজেলা পরিষদ হোক, সিটি করপোরেশন হোক। এটা অনেক বড় কর্মযজ্ঞ।’
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে আগেও বলা হয়েছিল, স্থানীয় সরকার নির্বাচন করতে গেলে আমরা জাতীয় সংসদ নির্বাচন যথাসময়ে করতে হয়তো পারব না। আর যেখানে বাংলাদেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল চায়, আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সেখানে তো স্থানীয় সরকার নির্বাচনের তো কোনো সুযোগই নেই, প্রশ্নই নেই।’
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির অবস্থান এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের অবস্থান হচ্ছে, আমরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্যই এতদিন সংগ্রাম করেছি, ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য এতদিন সংগ্রাম করেছি, আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংগ্রাম করেছি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের জন্য আমরা গণঅভ্যুত্থান করিনি। জাতির আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী, প্রত্যাশা অনুযায়ী একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ সংসদ নির্বাচন করাই এখন নির্বাচন কমিশনের প্রধান কাজ এবং প্রধান উপদেষ্টার ও এই সরকারের প্রধান কাজ।’ নির্বাচন নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষতা বজায় রাখবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।