সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিএসসি নার্সিং পরীক্ষা স্থগিত

হাইকোর্টের আদেশ অনুযায়ী আনোয়ারা-মুজাহিদ নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনসহ যাবতীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে না দেওয়ায় সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিএসসি নার্সিংয়ের সমুদয় পরীক্ষা স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট।
আজ মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) বিচারপতি কাজী জিনাত হক ও বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ স্থগিতাদেশ দেন। আগামীকাল বুধবার থেকে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন ১০ নার্সিং কলেজের পরীক্ষা হওয়ার কথা রয়েছে।
আদালতে আনোয়ারা-মুজাহিদ নার্সিং কলেজের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট সেলিম হাসান। রায়ের পর তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, আনোয়ার-মুজাহিদ নার্সিং কলেজের বিএসসি শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা গ্রহণের বিষয়ে হাইকোর্ট পূর্বে যে আদেশ দিয়েছিলেন, তা তামিল না করায় উচ্চ আদালত নতুন ওই আদেশ দেন।
আদেশে আগামী তিন সপ্তাহের জন্য সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাধীন ১০ নার্সিং কলেজের বিএসসি কোর্সের যাবতীয় পরীক্ষা স্থগিত করেন হাইকোর্ট।
রিটকারীর পক্ষের আইনজীবী বলেন, গত ২০ মে হাইকোর্ট শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনসহ সমুদয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করে তাদের পরীক্ষা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তা আমলে না নিয়ে পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ করে। আমরা বিষয়টি মঙ্গলবার আদালতের নজরে আনি। আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে তাৎক্ষণিক পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করেন।
জানা যায়, সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের যথাযথ অনুমোদন এবং কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মোতাবেক সুনামগঞ্জ শহরের আনোয়ারা-মুজাহিদ নার্সিং কলেজ শিক্ষার্থী ভর্তি করে। তাদের রেজিস্ট্রেশন ও পরীক্ষা প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষ গত এক বছর বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিয়েছে, কিন্তু কাঙ্ক্ষিত সাড়া মিলেনি। বরং, দফায় দফায় চিঠি চালাচালিতে সময়ক্ষেপণ হয়েছে। উপায়ান্তর না দেখে কলেজ কর্তৃপক্ষ আদালতের শরণাপন্ন হয়। গত মে মাসে হাইকোর্ট বিষয়টির যৌক্তিক সমাধানে, অর্থাৎ ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন রক্ষায় জরুরিভিত্তিতে রেজিস্ট্রেশনসহ প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেন। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারির রেজিস্ট্রার ও সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, রেজিস্ট্রার, অ্যাসিস্ট্যাট রেজিস্ট্রার ও কলেজ পরিদর্শককে হাইকোর্টের ওই আদেশ তামিল করার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু উচ্চ আদালতের সেই আদেশ বাস্তবায়ন না করেই বুধবার থেকে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য রুটিন ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগে নার্সিং শিক্ষার প্রসারে বেসরকারি পর্যায়ে উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ। হাওর ও সীমান্ত জেলা সুনামগঞ্জে প্রতিষ্ঠিত আনোয়ারা-মুজাহিদ নার্সিং কলেজ বহু বছর ধরে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে ডিপ্লোমা নার্সিং পরিচালনা করছে। ওই কলেজের বিএসসি নার্সিং কোর্সের রেজিস্ট্রেশন, একাডেমিক কার্যক্রম এবং পরীক্ষার বিষয়টি একান্তভাবেই সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাভুক্ত।
২০২৪ সালে সিলেট মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় উপরোল্লিখিত কলেজকে বিএসসি নার্সিং কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তির নির্দেশ প্রদান করে। পরবর্তীতে কলেজ কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগে বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে আবেদন করে। কিন্তু দফায় দফায় চিঠি ইস্যু হলেও কাজের কাজ কিছু করেনি মন্ত্রণালয়। মামলা পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত আইনজীবীরা বলছেন, যদি উচ্চ আদালতের এই রায়ের বিপরীতে মন্ত্রণালয় তথা সরকার আপিল করেও, তথাপি এর চূড়ান্ত নিষ্পত্তি সময়সাপেক্ষ। কিন্তু ছাত্রছাত্রীদের জীবন তো বসে থাকতে পারে না। তাছাড়া স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বা সরকার আপিল করলেও তার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত হাইকোর্টের রায় বহাল। এ অবস্থায় হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে, অর্থাৎ রায়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে (আনোয়ার-মুজাহিদ নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে) গত ৮ জুলাই পরীক্ষার রুটিন প্রকাশ করা হয়।