নিজের জীবন বিপন্ন করে শিক্ষার্থীদের রক্ষার চেষ্টা করেন মাহরিন

সকালে স্কুলের ঘণ্টা ঠিক সময়মতো বেজেছে। শিশুরা ক্লাস করেছে, টিফিন পিরিয়ড পার করেছে। ক্লাস শেষ। বাইরে অপেক্ষমাণ অভিভাবকেরা। ঘড়ির কাঁটায় সময় হলো স্কুল ছুটির। শিশুদের হাত ধরে স্কুল গেট পার করাতে প্রস্তুত ছিলেন উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের কো-অর্ডিনেটর মাহরিন চৌধুরী (৪২)। কিন্তু আজ ছুটির ঘণ্টা বাজার আগেই বিকট শব্দে আকাশ থেকে একটি যুদ্ধবিমান আছড়ে পড়ল স্কুলের এক ভবনে। মুহূর্তেই আগুনের ফুলকিতে চারপাশ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে থাকে। ঠিক সেই সময় শিশুদের নিজের বুকে আগলে রাখেন মাহরিন চৌধুরী। নিজের জীবন বিপন্ন করে বহু শিশুকে ভয়াবহ বিপদ থেকে রক্ষা করেছেন তিনি।
মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী ফাহিম খান বলেন, ‘আমি ক্লাসের বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দ শুনি, সামনে দেখি শুধু ধোঁয়া আর ধোঁয়া। কাছে যেতেই দেখি টেবিলে কয়েকজন এমনভাবে পুড়েছে, তাদের অস্তিত্বই বোঝা যাচ্ছে না। আরেকটা রুমে দেখি একজন ম্যাম কয়েকজন শিশুকে বুকের মধ্যে আগলে রেখেছেন। শিশুরা তেমন কিছু না হলেও ম্যামের অবস্থা খুবই খারাপ। তার পুরো পিঠ আগুনে পুড়ে গেছে। তিনি তখনও আগুনের মধ্যে দাঁড়িয়ে শিশুদের আগলে রেখেছেন। আমি তখন দুজন ছোটবোনকে বের করে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলাম। পরে জেনেছি, ম্যামকেও হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।’
এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন সেই শিক্ষিকার স্বামী মনসুর হেলাল। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘মাহরিনের পা থেকে মাথা পর্যন্ত সব পুড়ে গেছে। আমার মনে হচ্ছে, সে প্রায় ১০০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে।’
মনসুর হেলাল আরও বলেন, ‘লাইফ সাপোর্টে নেওয়ার আগে মাহরিন আমার সঙ্গে কথা বলেছে। সে বলেছে, স্কুল ছুটির পর বাচ্চাদের নিয়ে বের হচ্ছিল। ঠিক তখনই গেটের সামনে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। নিজে দগ্ধ হলেও সে বাচ্চাদের বাঁচানোর চেষ্টা করেছে। আপনারা আমার মাহরিনের জন্য দোয়া করুন, যেন আমি ওকে সুস্থ করে বাড়ি নিয়ে যেতে পারি।’
শিক্ষিকা মাহরিন চৌধুরী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। তার শরীরের প্রায় ৮০ শতাংশ পুড়ে গেছে বলে জানা গেছে। হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের সামনে দাঁড়িয়ে উৎকণ্ঠায় আছেন তার স্বামী। মাহরিনের পরিবার, সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা তার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।