গোপালগঞ্জের ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন হবে : সেতু উপদেষ্টা

সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, গোপালগঞ্জের ঘটনায় সরকার বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেটা হবে নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন। একজন বিচারপতির নেতৃত্বে এ কমিটি গঠন করা হবে।
আজ মঙ্গলবার (২২ জুলাই) দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন উপদেষ্টা।
উপদেষ্টা ফাওজুল কবির বলেন, বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটিতে শুধু সরকারি কর্মকর্তারা থাকবেন না, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও থাকবেন। এ কমিটি দু-এক দিনের মধ্যেই করতে চাচ্ছি। আশা করি, সাংবাদিকরা তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহায়তা করবেন। আপনাদের ব্যাখ্যাসহ বিভিন্ন বিষয় তাদের সঙ্গে শেয়ার করবেন। তাদের প্রতিবেদন পাওয়ার পর আমরা জানতে পারব ঘটনার দিন কী ঘটেছিল? কেন হয়েছিল?
উপদেষ্টা আরও বলেন, ঘটনাপ্রবাহ জানার জন্য প্রধান উপদেষ্টা আমাদের এখানে পাঠিয়েছেন। আমরা তথ্য সংগ্রহ করতে এসেছি। আমরা ঘটনার তদন্ত করতে আসিনি। যাতে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সেজন্য সরকার গভীরে যাবে।
উপদেষ্টা ফাওজুল কবির বলেন, এমন একটা পরিস্থিতি হবে—এটি স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন। কিন্তু এর ব্যাপকতা যে এত হবে, তা কেউ অনুমান করতে পারেনি। এই পরিস্থিতিতে আমাদের সীমিত সম্পদ ও লোকবল দিয়ে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সবাই মিলে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। সবাই অনেক কষ্ট স্বীকার করেছেন। নানা প্রতিকূলতা ও ঝুঁকি সত্ত্বেও দায়িত্ব পালন করেছে। আমরা তাদের ধন্যবাদ জানাই। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী খেয়ে না খেয়ে অনেক কষ্ট স্বীকার করেছেন। সাংবাদিকরা আহত হয়েছেন।
ফাওজুল কবির খান বলেন, এর আগের মতবিনিয়ম সভায় কিছু আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। এখানে আশঙ্কার কিছু নেই। আমরা একটি অন্তর্বর্তী সরকার, দল নিরপেক্ষ সরকার। শহীদদের রক্তের ওপর প্রতিষ্ঠিত সরকার। ২০ থেকে ৩০ হাজার আহতের আত্মত্যাগের সরকার। সুতরাং, গোপালগঞ্জও আমাদের কাছে যা, আমাদের নিজের জেলাও তা-ই। প্রধান উপদেষ্টা সেই বার্তাটাই দিয়েছেন। আমরা আপনাদের আশ্বস্ত করি—যারা অন্যায় করেছে, পুলিশের গাড়িতে আগুন দিয়েছে, আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য ও কর্মকর্তাদের ওপর হামলা করেছে। তারাতো অবশ্যই আইন অনুযায়ী তাদের শাস্তি পাবে। এ ছাড়া অন্য কেউ যেন হয়রানির স্বীকার না হয়। আপনাদের ব্যবসা বাণিজ্য, স্বাভাবিক জীবন যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেজন্য আমরা সচেষ্ট রয়েছি।
উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান আরও বলেন, আমরা চেষ্টা করছি, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সরকার গণতন্ত্রের চর্চা করবে। আগে গণতন্ত্রের চর্চা হয়নি। আগে বিরোধী দলমতকে দমন করা হয়েছে। আয়নাঘরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। নানা ধরনের শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এটির পরিবর্তন হয়েছে। এমন একটা পরিবেশ আমরা সৃষ্টি করতে চাই, যেখানে নির্ভয়ে তাদের মত প্রকাশ করতে পারবেন। আবার দায়িত্বশীলতার সঙ্গে মত প্রকাশ করতে পারে। এমন কোনো মতামত দেবেন, যাতে তাদের নিজেদের দল বা মতাদর্শের জন্য ক্ষতি না করেন।
উপদেষ্টা বলেন, আমরা আশা করি একটা সহনশীলতার পরিবেশ গড়ে উঠবে। আমাদের সামনে জতীয় নির্বাচন আছে, সেই নির্বাচন আমরা সুন্দর ও নিরপেক্ষ করব। যাতে মানুষ নির্ভয়ে তাদের ভোট দিতে পারে। পোলিং এজেন্টরা সেখানে প্রকাশ্যে ভোট গণনা ও ফলাফল ঘোষণা করবে। এজন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সহনশীলতা প্রয়োজন। যে-ই নির্বাচিত হয়ে আসবে তাদের আমরা সহায়তা করব। নির্বাচন যদি প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তাহলে আমাদের সমস্যা আরও বাড়বে। নির্বাচন আমাদের কাছে একটি অগ্নিপরীক্ষা। সবার সহায়তায় আমরা উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন করব।
গোপালগঞ্জে নিরীহ মানুষকে গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে উপদেষ্টা আরও বলেন, কোনো নিরীহ মানুষকে হয়রানি করা হবে না। পুলিশ বা কোনো দপ্তর থেকে মামলা দিলেই সেটা চূড়ান্ত নয়। এটা আমরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখব। আমরা চেষ্টা করব যাতে কোনো নিরীহ মানুষ হয়রারির শিকার না হয়। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও একটি কমিটি গঠন করেছে। তারাও বিষয়টি খতিয়ে দেখবে।
এর আগে সকালে এনসিপির পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে গোপালগঞ্জে দফায় দফায় সংঘর্ষে ও হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন স্থাপনা দুই উপদেষ্টা পরিদর্শন করেন।
আজ সকাল সাড়ে ১০টায় সড়ক পরিবহণ ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান এবং বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জেলা কারাগারে যান। এ সময় তারা ক্ষতিগ্রস্ত কারাগার পরিদর্শন করেন। তারা কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। বিভিন্ন বিষয়ে তারা খোঁজখবর নেন।
এরপর দুই উপদেষ্টা গোপালগঞ্জ শহরের পৌর পার্কের এনসিপির সভা মঞ্চ, সংঘর্ষের স্থান, জুলাই স্মৃতিস্তম্ভসহ ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন স্থাপনা ঘুরে দেখেন।
এ সময় মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশীদ, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী লে. জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ, কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ মো. মোতাহের হোসেন, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক, জেলা প্রশাসক মুহম্মদ কামরুজ্জামান, পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং এম তারেক সুলতান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. গোলাম কবির, জেলার তানিয়া জামান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম রকিবুল হাসান ও দুই মন্ত্রণালয়ের পদস্থ কর্মকর্তারাসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।