ঝালকাঠিতে জমতে শুরু করেছে ভাসমান পেয়ারা হাট

ঝালকাঠির কীর্ত্তিপাশা ইউনিয়নের ভিমরুলিতে অবস্থিত দেশের অন্যতম ভাসমান পেয়ারা হাট প্রকৃতি ও কৃষির এক অপূর্ব সমন্বয়। এখানে মাঠে নয়, খালের জলে সারি সারি নৌকায় চলে পেয়ারা বেচাকেনা। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে হাট। বর্ষাকালে এই হাট জমে ওঠে।
এই অঞ্চলে পেয়ারার পাশাপাশি আমড়া, লেবু, বাতাবি লেবু, কলা ও রবি শস্যের চাষ হয়। খালের দুই পাড়ের বাগানে পর্যটকেরা ট্রলারযোগে ঘুরে বেড়ান। নারী-পুরুষ উভয় চাষিরাই নৌকায় পেয়ারা তুলে বাজারে আনেন। পর্যটকদের জন্য নির্ধারিত ভাড়ায় নৌকা চলাচল করে।
২০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ভিমরুলিসহ আশপাশের ২০টিরও বেশি গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে পেয়ারার চাষ হচ্ছে। এখানে বছরে তিনবার ফুল আসে এবং আষাঢ়-ভাদ্র মাসে পেয়ারার ভরা মৌসুম। তবে পচনশীল হওয়ায় চাষিরা অনেক সময় ন্যায্য দাম পান না। এ কারণে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রক্রিয়াজাতকরণ (জ্যাম-জেলি) উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
সরকারিভাবে পেয়ারা ও শীতলপাটি ঝালকাঠির ব্র্যান্ডিং পণ্য। জেলা প্রশাসনের অর্থায়নে ভাসমান হাট এলাকায় ওয়াচ টাওয়ার, বসার জায়গা, গোসলের ঘাট, ফ্রি ওয়াই-ফাই ও পর্যটন উন্নয়নের কাজ চলছে। এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জাপান, আলজেরিয়াসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও পর্যটকরা হাট পরিদর্শন করেছেন।
ঝালকাঠি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, জেলায় ৫৬২ হেক্টর জমিতে এ বছর পেয়ারার চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলার কীর্ত্তিপাশা ও নবগ্রাম এই দুই ইউনিয়নের ১৬টি গ্রাম এবং পার্শ্ববর্তী গাভারামচন্দ্রপুর, বিনয়কাঠি ও শেখেরহাট ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম রয়েছে। সদর উপজেলা ও পিরোজপুরের নেছারাবাদ (স্বরূপকাঠি) উপজেলার পাশাপাশি বরিশাল জেলার বানারীপাড়া উপজেলারও ১৫টি গ্রামে পেয়ারার বাণিজ্যিক চাষ হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফারহানা ইয়াসসিন বলেন, এখানকার চাষীরা অনেক সময় আশানুরূপ দাম পান না। কারণ পেয়ারা খুব দ্রুত বিক্রি করতে হয়। হিমাগারেও সংরক্ষণ করা সম্ভব না। চাষিদের নিয়ে পেয়ারার জ্যাম জেলি কীভাবে বানানো যায়, সে বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের পরিকল্পনা আছে।
ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক আশরাফুর রহমান বলেন, ভিমরুলি ভাসমান বাজারের পাশে পর্যটকদের জন্য ওয়াচ ব্লক, সিটিং জোন, গোসলের জায়গা এবং নদীতে ঘাটলা তৈরি করে দেওয়া হয়েছে ট্যুরিজম বোর্ড ও এলজিইডির অর্থায়নে। ফ্রি ওয়াই-ফাই জোন করে দেওয়া হয়েছে আইসিটি অধিদপ্তরের মাধ্যমে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরও কিছু উন্নয়ন কাজের পরিকল্পনা রয়েছে। বিশেষত হোটেল মোটেল করা যায় কি না সেদিকে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে চেষ্টা করা হচ্ছে। এ ছাড়া শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষায় উচ্চ শব্দের সাউন্ড সিস্টেম ও ডিজে পার্টি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।