নড়াইল কৃষি ও কারিগরি কলেজে অনিয়ম, তদন্তে জেলা প্রশাসন

নড়াইল সদর উপজেলার ইচড়বাহা এলাকায় অবস্থিত নড়াইল কৃষি ও কারিগরি কলেজে নানাবিধ অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়া হয়েছে। অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
অভিযোগপত্র সূত্রে জানা গেছে, কলেজটি ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও ২০১৯ সালে এটি এমপিওভুক্ত হয়। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন নড়াইল আব্দুল হাই সিটি কলেজের সহকারী অধ্যাপক সসীম সরকার। যদিও তিনি সিটি কলেজে কর্মরত থাকা অবস্থায়ই এমপিওভুক্ত এই কলেজের প্রশাসনিক কার্যক্রম ও ব্যাংক হিসাব পরিচালনা করতেন, যা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিধিবিধানের পরিপন্থী।
পরবর্তীতে কলেজ পরিচালনা কমিটির একটি রেজুলেশনের মাধ্যমে অবসরপ্রাপ্ত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা রমেশ বিশ্বাসকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া হয়। অভিযোগে বলা হয়, রমেশ বিশ্বাস এই পদের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা পূরণ করেন না এবং তার কোনো নিয়োগপত্রও নেই।
এছাড়াও অভিযোগে বলা হয়, এমপিওভুক্তির পূর্বে একটি নামমাত্র ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে কলেজ পরিচালিত হতো, যার নেতৃত্বে ছিলেন ভগীরথ বিশ্বাস ও সসীম সরকার। অভিযোগে তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ নিয়োগ ও স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে কলেজ পরিচালনার অভিযোগ আনা হয়েছে। অধ্যক্ষসহ বিভিন্ন নিয়োগে স্বচ্ছতা না থাকায় ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বাড়েনি, বরং বাইরের শিক্ষার্থীদের দেখিয়ে বিভিন্ন প্রোগ্রাম ও পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী কলেজে মোট ছাত্রছাত্রী সংখ্যা ছিল ৪ সেমিস্টারে মাত্র ৮৭ জন।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, কলেজের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র ও রেজুলেশন সংক্রান্ত কাগজপত্র সসীম সরকারের বাড়িতে সংরক্ষিত রয়েছে এবং সেখান থেকেই কলেজ পরিচালিত হয়। ফাউন্ডেশনের নামে পরিচালিত হওয়ায় সরকারি কোনো ভবনও নির্মিত হয়নি। এসব অনিয়ম দূর করে ফাউন্ডেশন বাতিল ও কলেজের উন্নয়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ রমেশ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, আমাকে পরিচালনা কমিটি রেজুলেশনের মাধ্যমে নিয়োগ দিয়েছে। আমার কোনো নিয়োগপত্র নেই। কলেজ পরিচালনার জন্য আমি কাজ করছি। ব্যাংক হিসাব সসীম বাবুর কাছ থেকে এখন আমার নামে করা হয়েছে।
সিটি কলেজের সহকারী অধ্যাপক সসীম সরকার বলেন, ২০০৫ সালে স্থানীয়দের নিয়ে আমি কলেজটি প্রতিষ্ঠা করি, এটিই আমার আত্মতৃপ্তি। বর্তমানে কলেজের কোনো কর্মকাণ্ডে আমি জড়িত নই। যেহেতু অভিযোগটি তদন্তাধীন, এ বিষয়ে মন্তব্য করব না।
কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি ভগীরত চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, অধ্যক্ষ না থাকায় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রমেশ বাবুকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কলেজের ভবন জরাজীর্ণ হওয়ায় কাগজপত্র সসীম বাবুর বাড়িতে রাখা হয়। তিনি কলেজের একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আহসান মাহমুদ রাসেল বলেন, নড়াইল কৃষি ও কারিগরি কলেজের অনিয়ম সংক্রান্ত একটি অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্টদের অফিসে ডাকা হয়েছে। তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।