জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বীর শহীদ যোদ্ধারা আমাদের অহংকার : অ্যাটর্নি জেনারেল

অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের বীর শহীদ যোদ্ধারা আমাদের অহংকার। বাংলাদেশ যতদিন থাকবে তাদের স্মরণ করা হবে শ্রদ্ধার সঙ্গে। তাদের স্মৃতি কেউ মুছে ফেলতে পারবে না।
আজ শুক্রবার (৮ আগস্ট) বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের জাতীয় বীরদের নিয়ে অনুষ্ঠিত ‘লাল জুলাইয়ের কবিতা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অ্যাটর্নি জেনারেল এসব কথা বলেন।
মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা আর সেই দিনে ফিরে যেতে চাই না, যে সময়ে পুলিশ বাদী হয়ে সাধারণ মানুষের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছিল। মানুষদেরকে ঘর থেকে ধরে নিয়ে গুম করেছিল, হত্যা করেছিল। জুলাই অভ্যুত্থান আমাদেরকে সেই অমোঘ অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে এসেছে। তাই জুলাই অভ্যুত্থানের জাতীয় বীরদেরকে আমাদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করতে হবে আজীবন। আমাদেরকে বীরদের স্মরণে পাশাপাশি আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।’
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আগামীর বাংলাদেশ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে। বিনা অপরাধে কাউকে জেলে যেতে হবে না। কেউ যাতে বাংলাদেশে আর ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র কায়েম করতে না পারে, সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ বীরেরা আমাদেরকে সেটাই শিক্ষা দিয়ে গেছেন।’
‘চব্বিশ-একাত্তর-বায়ান্ন, হারতে দেব না কখনো’ স্লোগানে চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণে ২০২৪ সালের ধারাবাহিকতায় এবছরও সাধারণ সংস্কৃতিকর্মী ও শিল্পীসমাজ আয়োজন করে ‘লাল জুলাইয়ের কবিতা-২০২৫’।
আজ শুক্রবার বিকেল ৪টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হয় এই আবৃত্তি আয়োজন।
চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের সময় থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত যেসব কবি জুলাইকে কাব্যরূপ দিয়েছেন সেখান থেকে বাছাইকৃত কবিতা আবৃত্তি করেন প্রায় ১০০ আবৃত্তিশিল্পী ও কবি।
অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদ ইয়ামিনের বাবা মো. মহি উদ্দীন ও গণঅভ্যুত্থানে গুলি খেয়ে মুখের অবয়ব হারানো জুলাই যোদ্ধা খোকন চন্দ্র বর্মন। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি মোহন রায়হান।
বিকেল ৪টায় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এই আয়োজন। এরপর মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি ও জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন সমবেত উপস্থিতি। পরে বিশিষ্ট আবৃত্তিশিল্পী সামছুদ্দোহা পাটোয়ারীর নির্দেশনায় বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের কামাল পাশা কবিতার কোরাস আবৃত্তি দিয়ে শুরু হয় আয়োজনের মূল পর্ব। এতে সূচনা বক্তব্য দেন ‘লাল জুলাইয়ের কবিতার’ তিন উদ্যোক্তা আঞ্জুমান লায়লা নওশিন, ফাহমিদা সূচনা ও অনন্যা মাহমুদ।
এরপর আলোচনা পর্ব পরিচালনা করেন বরেণ্য আবৃত্তিশিল্পী মেহেদী হাসান।
এ সময় জুলাইয়ে মুখের অবয়ব হারানো আহত যোদ্ধা খোকন চন্দ্র বর্মন নিজের চিকিৎসা নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেন। তিনি জুলাই শহীদ যোদ্ধাদের স্মরণ রাখার পাশাপাশি আহতদেরকেও চিকিৎসার নিশ্চিত করার জন্য বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার প্রধানের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, এই সরকার জুলাই আহতযোদ্ধাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে না পারলে আগামীতে তাদের অনিশ্চিত জীবন কাটাতে হবে।
অনুষ্ঠানে জুলাই শহীদ ইয়েমিনের পিতা মো. মহিউদ্দিন বলেন, আমাদের সন্তানরা যে প্রত্যাশা নিয়ে ফ্যাসিবাদ সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল, সেই স্বপ্ন আমাদের এখনো অধরা। যেই পুলিশ হাসিনার পক্ষ নিয়ে আমাদের সন্তানদের বুক ঝাঁঝরা করে তাদের জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দিয়েছিল, সেই পুলিশ এখনও রয়েছে, নতুন কোনো পুলিশ নিয়োগ দেওয়া হয়নি বলে আক্ষেপ করেন তিনি।
শহীদ ইয়ামিনের পিতা বলেন, বাংলাদেশের সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই আমাদের সন্তানদের জীবনের উৎসর্গ পূর্ণতা পাবে।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে বিশিষ্ট ও উদীয়মান আবৃত্তিশিল্পীরা। পরে মুক্তির মন্দির সোপানতলে গানের পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় লাল জুলাইয়ের কবিতা ২০২৫ অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে আহত জুলাই যোদ্ধারা ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।