রাজশাহী অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতির চিত্র পাল্টাবে আম রপ্তানি

নওগাঁর সোহেল রানা চলতি বছরের ২৫ জুন থেকে ১ জুলাই কাতারের সুক ওয়াকিফে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশি ম্যাংগো ফেস্টিভাল ২০২৫’-এ ৪ হাজার ৫০০ কেজি আম নিয়ে অংশগ্রহণ করেন। যেখানে কেজি প্রতি প্রায় ২৫০ টাকা খরচ হলেও তিনি আম বিক্রি করেন কেজি প্রতি ৫০০ টাকায়, যা প্রায় ২২ লাখ ৫০ হাজার টাকার বেশি।
বাংলাদেশে যেখানে আম বিক্রি হয় কেজি প্রতি সর্বোচ্চ ৭৫ টাকা, সেখানে বিদেশে বিক্রিতে কৃষকরা ব্যাপক লাভের সম্ভাবনা পাচ্ছেন। সোহেল রানা ২০০ বিঘা জমিতে আম চাষ করেন এবং ২০২১ সাল থেকে ইউরোপে আম রপ্তানি শুরু করেছেন।
রাজশাহী ও নওগাঁ অঞ্চলে আমের উৎপাদন ও রপ্তানি বেড়ে চলেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আম উৎপাদন ও রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে এবং প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ার পরিকল্পনা চলছে।
ফল মোড়ানোর আধুনিক পদ্ধতির কারণে রপ্তানিযোগ্য আমের মান বেড়েছে, যা কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছে। নওগাঁর আম এখন ইউরোপ ও চীনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বাজারে পৌঁছাতে শুরু করেছে। সরকার রপ্তানিকারকদের প্রণোদনা দিচ্ছে এবং আম রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য নতুন প্রযুক্তি ও সুবিধার প্রয়োজনীয়তা জোর দিয়ে বলা হচ্ছে।
রাজশাহী অ্যাগ্রো ফুড প্রোডিউসার সোসাইটির সভাপতি আনোয়ারুল হক জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাজশাহীর আম ইউরোপসহ আন্তর্জাতিক বাজারে পৌঁছেছে, যা বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের নতুন সুযোগ খুলে দিয়েছে। ফল মোড়ানোর পদ্ধতির ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ফলে কীটনাশকমুক্ত আম উৎপাদন সম্ভব হয়েছে, যা ফলমাছির আক্রমণও কমিয়েছে।
তিনি বলেন, কৃষি চর্চা বিষয়ে ভালো মানের প্রশিক্ষণের ফলে অনেক কৃষক ও মূল্য শৃঙ্খলের অংশীদাররা উচ্চমূল্যের রপ্তানি বাজারে প্রবেশ করতে পারছেন। যদিও রপ্তানির লাভ স্থানীয় বিক্রির প্রায় দ্বিগুণ, তবে এতে বেশি বিনিয়োগ, যত্ন এবং আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োজন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান বলেন, এ অঞ্চলে ধান ও আলুর পর আম এখন তৃতীয় গুরুত্বপূর্ণ কৃষিপণ্য হিসেবে ওঠে এসেছে। তবে তিনি রপ্তানি বাজার সম্প্রসারণের জরুরি প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
তিনি বলেন, এ অঞ্চলে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ আম উৎপাদন হলেও রপ্তানি হয় সামান্য পরিমাণ। আমাদের আরও বিদেশি বাজার খুঁজতে হবে।