বর্ষায় জমে উঠেছে নড়াইলের ডোঙার হাট

নড়াইল-যশোর মহাসড়কের পাশে বিশাল এক রেইনট্রি গাছের নিচে বসেছে প্রায় অর্ধশত বছর ধরে চলে আসা এক জমজমাট হাট। এই হাটে বিকিকিনি হয় বিশেষ ধরনের এক জলযান, যার স্থানীয় নাম ‘ডোঙা’। সাধারণ ডিঙি নৌকার চেয়েও ছোট আকৃতির এই ডোঙাগুলো নিয়ে নড়াইলের বিভিন্ন গ্রাম থেকে কারিগরেরা প্রতি সপ্তাহে এখানে আসেন।
নড়াইল সদর উপজেলার তুলারামপুর বাজারে প্রতি সোম ও শুক্রবার এই ডোঙার হাট বসে। সকাল ৭টা থেকে শুরু হয়ে দুপুর পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। মূলত বর্ষাকালেই এই হাটের জৌলুস বাড়ে। শুধু নড়াইল নয়, সাতক্ষীরা, যশোর, খুলনা, বাগেরহাট, মাগুরা ও গোপালগঞ্জ থেকেও ক্রেতারা এখানে ডোঙা কিনতে আসেন।
ডোঙা তৈরির প্রধান উপকরণ হলো কমপক্ষে ২০ বছর ৩০ বছর বয়সী তালগাছ। চারজন কারিগর মিলে দুটি ডোঙা বানাতে পুরো একদিন সময় ব্যয় করেন। প্রতিটি তালগাছকে মাঝখান দিয়ে দুই ভাগ করে ভেতরের নরম অংশ ফেলে দিয়ে শক্ত খোলস দিয়ে তৈরি করা হয় এই বাহন। সাধারণ নৌকার মতো এতে কোনো আলকাতরা বা রং ব্যবহার করা হয় না। ডোঙার দাম নির্ভর করে গাছের বয়স, মান ও আকৃতির ওপর।
এখানে সারি সারি সাজানো ডোঙাগুলোর মাথা বিভিন্ন মাছের আদলে তৈরি করা হয়। যেমন—মাথা মাগুর মাছের মতো দেখতে হলে নাম ‘মজগুর মাথা’, আবার কোনোটার নাম ‘শোল মাথা’ বা ‘কাইল্লে মাথা’।
এই অঞ্চলের স্থানীয়দের কাছে ডোঙা জনপ্রিয় হওয়ার মূল কারণ হলো এটি দামে কম এবং সহজেই বহনযোগ্য। স্রোতহীন বা অগভীর জলে যাতায়াত, মাছ ধরা, শাপলা তোলা, ধান-পাট কাটা এবং শামুক সংগ্রহের জন্য এটি একটি সহজ ও সুলভ বাহন। এলাকার শিশুরা ছোট বাঁশকে বৈঠা হিসেবে ব্যবহার করে ডোঙা নিয়ে খাল-বিল বা ছোট নদীর ওপর ভেসে বেড়ায়।
গত শুক্রবার (৮ আগস্ট) ডোঙা কিনতে হাটে এসেছেন মাগুরা জেলার রিপন কুমার বিশ্বাস। তিনি জানান, মাছ ধরা ও শামুক সংগ্রহের জন্যই তিনি এটি ব্যবহার করেন। ডোঙার স্থায়িত্ব নির্ভর করে গাছের সারের ওপর। যদি ডোঙার গায়ে কালো দাগ থাকে, তাহলে বুঝতে হবে এটি ভালো মানের এবং বেশিদিন টিকবে।
চর শালিখা গ্রামের সোহাগ শেখ বংশ পরম্পরায় ডোঙা তৈরির কাজ করছেন। তিনি জানান, লাভ সীমিত হলেও দূরদূরান্ত থেকে মানুষ এখনও তাদের ডোঙা কিনতে আসে। ছোট ডোঙাগুলো তিন থেকে চার হাজার এবং বড় ডোঙা ছয় থেকে দশ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।

নড়াইল জেলা বিসিক কার্যালয়ের উপব্যবস্থাপক মো. সোলায়মান হোসেন বলেন, চর শালিখা গ্রামে প্রায় একশ পরিবার এই পেশার সঙ্গে যুক্ত। এটি তাদের আদি পেশা। এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে বিসিক সব ধরনের সহযোগিতা করে থাকে।