‘বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য পৃথক আদালত নেই, এটি কাঠামোগত অসংগতি’

প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমদ বলেছেন, বর্তমানে বাংলাদেশে বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য পৃথক কোনো বিচারিক ফোরাম নেই। কোটি কোটি টাকার বাণিজ্যিক বিরোধ ছোটখাটো দেওয়ানি মামলার সঙ্গে একই সারিতে নিষ্পত্তি করতে যাওয়ায় দ্রুত ও কার্যকর বিচার প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। এটি বিচারকদের নয়, কাঠামোগত অসংগতি। ফলে মামলার জট বেড়ে যাচ্ছে এবং ব্যবসায়িক সম্পর্ক ও বিনিয়োগ পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত শুধু অর্থ ঋণ আদালতেই প্রায় ২৫ হাজারেরও বেশি মামলা অমীমাংসিত রয়েছে।
রোববার (১৭ আগস্ট) দুপুরে সিলেটের একটি হোটেলে ‘খসড়া বাণিজ্যিক আদালত গঠন’ বিষয়ক এক সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন।
সৈয়দ রেফাত আহমদ বলেন, একটি বিশেষায়িত বাণিজ্যিক আদালত প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম অনেক দূর এগিয়েছে। বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সঙ্গে এ বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে। তিনি জানান, জুলাই মাসে বিডা, ইউএনডিপি ও ইইউ মিলে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে একটি সংলাপে আইনজীবী ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি পাওয়া গেছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে এজেন্ডা ধরে কাজ করা হচ্ছে এবং চূড়ান্ত খসড়া সরকারকে দেওয়া হবে।
প্রধান বিচারপতি রুয়ান্ডা, ভারত ও পাকিস্তানের উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, বাণিজ্যিক আদালত গড়ে দক্ষ, স্বচ্ছ ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব। বাংলাদেশের জন্য এই অভিজ্ঞতাগুলো গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা বহন করে।
প্রস্তাবিত বাণিজ্যিক আদালতের সাতটি মূল স্তম্ভের কথা উল্লেখ করে সৈয়দ রেফাত আহমদ বলেন, এর মধ্যে রয়েছে স্পষ্ট ও একীভূত এখতিয়ার, আর্থিক সীমা ও স্তরভিত্তিক কাঠামো, বাধ্যতামূলক কেস ম্যানেজমেন্ট ও কঠোর সময়সীমা এবং প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার। তিনি আরও জানান, এই আদালত প্রতিষ্ঠিত হলে বিচারকদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে এবং বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে জবাবদিহি নিশ্চিত করা হবে। এটি কেবল নতুন আদালত নয়, বরং অর্থনৈতিক ন্যায়বিচারের জন্য একটি নতুন ভিত্তি।
সেমিনারের মূল পর্বে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমদ। এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন সিলেটের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমান, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার, ইউএনডিপি আবাসিক প্রতিনিধি স্টেফান লিলার এবং হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি জাফর আহমেদ। সেমিনারে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা ও আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।