ঘুষের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে সাভার পৌরসভায় দুই কর্মকর্তার মারামারি, তদন্ত কমিটি গঠন

ঘুষের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে সাভার পৌরসভার অফিসকক্ষে দুই কর্মকর্তার মারামারির ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) গঠিত কমিটির প্রধান করা হয়েছে পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুল ইসলামকে।
কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে এবং প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পৌর প্রশাসক আবুবকর সরকার।
মারামারিতে জড়ানো দুই কর্মকর্তা হলেন—সাভার পৌরসভার কর নির্ধারক নাজমুল হাসান এবং সহকারী কর আদায়কারী নজরুল ইসলাম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সাভার পৌরসভায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না থাকার সুযোগে এই দুই কর্মকর্তা রীতিমতো ‘ঘুষের হাট’ বানিয়ে ফেলেছিলেন পৌরসভার নিজ কার্যালয়কে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, চলতি বছরের জুন মাসে পৌর এলাকার দক্ষিণ দরিয়াপুর মৌজার একটি হোল্ডিংয়ের মালিকানা পরিবর্তনের জন্য হাকিম আলী সরদার নামের এক বাসিন্দা সাভার পৌরসভায় আবেদন করেন। সেবাগ্রহীতার কাছ থেকে নেওয়া ৫ হাজার টাকা ঘুষের ভাগাভাগি নিয়ে অফিসকক্ষে প্রকাশ্যে মারামারিতে জড়ান সহকারী কর আদায়কারী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ও কর নির্ধারণ কর্মকর্তা মো. নাজমুল হাসান।
২০ আগস্ট দুপুর দেড়টার দিকে কর নির্ধারণ কর্মকর্তা নাজমুল হাসানের কক্ষে ঘটা এই মারামারির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে পৌরসভায় সেবা গ্রহণের বিনিময়ে ঘুষ আদায়ের বিষয়টি আলোচনায় আসে। ভিডিওতে দেখা যায়, নাজমুল হাসান তার চেয়ারে বসে আছেন এবং কয়েকজন ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছেন। এমন সময় নজরুল ইসলাম উপস্থিত হন এবং দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। একপর্যায়ে নজরুল ইসলাম নাজমুল হাসানের দিকে তেড়ে যান এবং উপস্থিত ব্যক্তিরা তাকে থামানোর চেষ্টা করলেও দুজনই একে অপরকে কিল-ঘুষি মারতে শুরু করেন। পরে উপস্থিত লোকজন তাদের শান্ত করেন।
পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম বলেন, করের অতিরিক্ত টাকা ভাগাভাগি নিয়ে দুই কর্মকর্তা মারামারিতে জড়িয়ে পড়েছেন। তিনি বলেন, অফিস কক্ষে এ ধরনের আচরণ করা উচিত হয়নি। এমন আচরণের কারণে সেবা প্রদানকারী সংস্থা হিসেবে সাভার পৌরসভার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে এবং উভয় কর্মকর্তাই আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন।
জানতে চাইলে কর নির্ধারণ কর্মকর্তা নাজমুল হাসান বলেন, নজরুল ইসলাম আমার জুনিয়র। হোল্ডিং ট্যাক্স ও নামজারি ফি বাবদ এক লোক নজরুল ইসলামকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছেন। ওই লোক তার পরিচিত। আমি নজরুলকে ডেকে বলি, নামজারি ফি ১১৫০ টাকার রশিদ আছে কিন্তু হোল্ডিং ট্যাক্সের রশিদ দেননি, কিন্তু স্বাক্ষর করেছেন। এই কথা বলা মাত্রই তিনি উত্তেজিত হয়ে আক্রমণ করেন।’
এদিকে, সহকারী কর আদায়কারী কর্মকর্তা নজরুল ইসলামের বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে কল করা হলে তার ছেলে জানান, বাবা বাসায় মোবাইল ফোন রেখে বাইরে গেছেন।
পৌর প্রশাসক ও সাভার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আবুবকর সরকার বলেন, দুই কর্মকর্তার এমন ঘটনায় পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা সাইদুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে এবং প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।