নির্বাচনি রোডম্যাপ প্রায় চূড়ান্ত, ঘোষণা হতে পারে রোববার

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আগামী রোববার আসতে পারে সেই ঘোষণা। ইসি সূত্রে এমনটাই জানা গেছে।
চলতি সপ্তাহে নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা করার কথা থাকলেও তা পারেনি নির্বাচন কমিশন। এ সংক্রান্তে আজ বৃহস্পতিবারও (২১ আগস্ট) বৈঠকে বসে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি। চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা এ বৈঠকে ছিলেন।
তবে, অন্য জরুরি কাজে ব্যস্ত থাকায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এই বৈঠকে ছিলেন না। ইসি সচিব জাপানে রয়েছেন। সেজন্য, আজকের বৈঠকে রোডম্যাপ প্রায় চূড়ান্ত করে রাখা হয়েছে। বৈঠকের একটি সূত্র জানিয়েছে, রোডম্যাপ প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। কেবল গুরুত্বপূর্ণ কিছু তারিখের ঘর খালি রাখা হয়েছে।
সূত্রটির দাবি, আগামী রোববার এ সংক্রান্তে আবার বৈঠকে বসবে ইসি। সেদিন রোডম্যাপ চূড়ান্ত করবে। ওইদিন ঘোষণা্ও করবে। আগামী ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা করতে পারে ইসি। সেভাবেই প্রস্তুত হচ্ছে নির্বাচনি রোডম্যাপ।
আজকের বৈঠকের পর একজন নির্বাচন কমিশনার জানান, রোডম্যাপ বা কর্মপরিকল্পনার কাজ চূড়ান্ত করা হয়েছে। রোডম্যাপের কোথাও কোথাও তারিখগত কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। এটা নিয়ে আগামী রোববার আবার একটু বসা দরকার। ওইদিনই রোডম্যাপ ঘোষণা করা হবে বলেও তিনি জানান।
এর আগে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ৫ আগস্ট রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেন, আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে চিঠি পাঠাব, যেন নির্বাচন কমিশন আগামী রমজানের আগে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
তারপর থেকে সরকার এবং নির্বাচন কমিশন নির্বাচনি ট্রেনে পা রাখে। নির্বাচনি মাঠে নেমেছে রাজনৈতিক দলগুলোও। নির্বাচন কমিশন রোডম্যাপ প্রস্তুতও করে ফেলেছে। যে রোডম্যাপ অনুযায়ী, আসন্ন সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আগামী রোববার এ রোডম্যাপ ঘোষণা করা হলে পুরো দেশ নির্বাচনমুখী হয়ে উঠবে।
বৈঠকে থাকা ইসির কর্মকর্তারা জানান, রোডম্যাপে নির্বাচনের কার্যক্রমগুলো কখন কোনটি করা হবে, তা নির্দিষ্ট করা হচ্ছে। এবার প্রবাসী বাংলাদেশি এবং নির্বাচনি কাজে নিয়োজিত সরকারি কর্মকর্তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ দেওয়ার বিষয়টি রোডম্যাপে উল্লেখ করা হচ্ছে। এ কার্যক্রমে যুক্ত বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও বিভাগগুলোর কাজ সুনির্দিষ্ট করা হচ্ছে। কে-কীভাবে কাজ করবে, তাও নির্ধারণ করা হয়েছে।
ইসি অক্টোবরের মধ্যে নির্বাচনের মূল ‘প্রস্তুতি’সেরে ফেলতে চায়। এ সময়সীমার মধ্যে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ, দল নিবন্ধন, পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংস্কার, আচরণবিধিমালা জারি ও ভোটার তালিকার মতো বিষয় চূড়ান্ত করে ফেলার কথা রোডম্যাপে তুলে ধরা হবে। এসব চূড়ান্ত করতে গত কয়েকদিন টানা পরিশ্রম করছেন নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা।
৫ আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার ২১ নভেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে নিয়োগ দেয় এ এম এম নাসির উদ্দীনকে। নিয়োগ দেয় অন্য কমিশনারদেরও। এরপর থেকে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে চলেছে নির্বাচন কমিশন। এখন পর্যন্ত নির্বাচনের জন্য যা যা করণীয়, তা করে চলেছে প্রতিষ্ঠানটি।
রোডম্যাপে সংলাপ, মতবিনিময়, বৈঠক, ব্রিফিং, প্রশিক্ষণ, মুদ্রণ, বাজেট বরাদ্দ, আইটি ভিত্তিক প্রস্তুতি, প্রচারণা, সমন্বয় সেল, আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক থেকে যাবতীয় কর্মপরিকল্পনা মাথায় রেখে উল্লেখযোগ্য খাত ও বাস্তবায়নসূচি থাকছে। তফসিলের আগে ও পরের কাজ ঠিক করতে যা যা করা দরকার হবে, তাও উল্লেখ থাকছে রোডম্যাপে।
বর্তমান নির্বাচন কমিশন প্রাক-নির্বাচন ও তফসিল পূর্ববর্তী ‘প্রাথমিক কর্মপরিকল্পনা’ এবং তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচন পরিচালনার জন্য ‘কর্মপরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের সূচি’ সংক্রান্ত করণীয় কাজের তালিকা তৈরি করে সুবিধার জন্য। যাকে গণমাধ্যম রোডম্যাপ বলে প্রচার করে আসছে।
২০০৭-২০০৮ সালে প্রথমবারের মত রোডম্যাপ ঘোষণা করে তৎকালীন ইসি। ২০০৭ সালের ১৫ জুলাই দেড় বছরের রোডম্যাপ দেওয়া হয়, সেখানে ২০০৮ সালে অক্টোবর-ডিসেম্বরে তফসিল ও ভোটের সময়সূচি ধরা হয়। ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন শুরু হয়। আইন-বিধি সংস্কার, দল নিবন্ধনের পর সেই ভোটার তালিকা দিয়ে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচন হয়।
২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনের দুই বছর আগে রোডম্যাপ ঠিক করে তৎকালীন ইসি। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ২০১৮ সালে অক্টোবরের মাঝামাঝি ভোটের কর্মপরিকল্পনা ও বাস্তবায়নসূচি অনুমোদন করে তৎকালীন কমিশন। সবশেষ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ‘কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ’ অনুষ্ঠান করে তখনকার ইসি।