সেতু নির্মাণ কাজে অনিয়মের অভিযোগ

পটুয়াখালীর দশমিনায় সেতু নির্মাণ কাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার, খালে বাঁধ দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ এবং চুক্তি অনুযায়ী কাজ না করাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেছেন, নির্মাণ কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা পটুয়াখালী সড়ক বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলীকে ম্যানেজ করেই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি প্রকাশ্যে এ অনিয়ম করছে।
পটুয়াখালী সড়ক বিভাগ সূত্র জানায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে লেবুখালী- বাউফল-গলাচিপা- আমরাগাছিয়া আঞ্চলিক সড়েকর দশমিনা উপজেলার বহরামপুর খালের ওপর ২৫ দশমিক ৭৪ মিটার নবকাচারি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ছয় কোটি ৭৪ লাখ ৬৩ হাজার ৩২৭ দশমিক ৬৮ টাকা চুক্তিমূল্যে কাজটি পায় বরিশালের ওরিয়েন্ট ট্রেডিং অ্যান্ড বিল্ডার্স লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত ৬ জানুয়ারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেন পটুয়াখালী সড়ক বিভাগ। মাঠ পর্যায়ে নির্মাণ কাজ তদারকির দায়িত্বে রয়েছেন পটুয়াখালী সড়ক বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী আসাদুল ইসলাম।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, বহরমপুর খালে বাঁধ দিয়ে রাখা হয়েছে। এতে সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে পানির প্রবাহ। ভরাট হয়ে যাচ্ছে খালটি। সেতুর পাইল নির্মাণের কাজ চলছে। ঢালাইয়ের কাজে এক নম্বর সিসেট স্যান্ড বালু ব্যবহার করার কথা থাকলে ব্যবহার করা হচ্ছে চট্টগ্রামের লবণাক্ত বালু। যে রড ব্যবহার করা হচ্ছে তা-ও বাজারের নিম্নমানের।
স্থানীয়রা বলেন, নির্মাণ কাজের শুরু থেকে ঠিকাদার অনিয়ম করছেন। স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তিকে ম্যানেজ করে নিয়ম না থাকলেও খালে বাঁধ দেওয়া হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন আমন চাষিরা। পানি চলাচল না করায় বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে অনেকের। অপরদিকে সেতুর মূল ভিত্তি পাইল নির্মাণে ব্যবহার করা হচ্ছে সিলেট স্যান্ড বালি, যাতে সেতুর স্থায়িত্বকে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

গলাচিপা-দশমিনা-বাউফল- বরিশাল রুটের পরিবহণ চালক মো. জয়নাল মিয়া (৪৫) বলেন, সেতুর নির্মাণ কাজে যেসব বালু রড ব্যবহার করা হচ্ছে, তা বাজারের সবচে খারাপ। এসব দিয়ে কাজ করলে অল্প দিনেই সেতুর স্থায়িত্ব শেষ হয়ে যাবে।
স্থানীয় বাসিন্দা খলিল হোসন বলেন, খালের ওপর ২৫ মিটার সেতুর নির্মাণ কাজে ব্যয় প্রায় সাত কোটি টাকা। এত টাকায় সেতু নির্মাণ করলে ৫০০ বছরেও কিছু হওয়ার কথা না। তবে যেভাবে মানহীন মালামাল দিয়ে কাজ করা হচ্ছে তাতে ১০ বছর পরেই সেতু ভেঙে পড়বে।
এসব অভিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে কথা বলতে অপরগতা প্রকাশ করেছেন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মো. জসিম উদ্দিন। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, এসব বিষয়ে কাজের দায়িত্বে থাকা স্যারের সঙ্গে কথা বলুন।

নির্মাণ কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা পটুয়াখালী সড়ক বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী আসাদুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় কয়েকজন বলেছেন খালে বাঁধ দিলে সমস্যা নেই, তা বাঁধ দিয়ে কাজ করছি। আর আমি কাজের সাইটে আসার আগেই কিছু সিলেট চান বালু ব্যবহার করা হয়েছে। আমি এসে ওই বালু দিয়ে কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। মানহীন রডের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন তিনি বলেন, ওই রড আর ব্যবহার করা হবে না।
যদিও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ওই লবণাক্ত বালু ও মানহীন রড দিয়েই সেতুর নির্মাণের কাজ চলছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জামিল আক্তার বলেন, ‘শিডিউল অনুযায়ী কাজ করতে হবে। কাজে কোনো অনিয়ম করা যাবে না। আমি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।’