বাগেরহাটের চারটি আসনই রাখার দাবি শুনানিতে

নির্বাচন কমিশনে শুনানি চলছে। এ শুনানিতে অংশ নিয়ে বাগেরহাটে চারটি আসন বহাল রাখার দাবি জানিয়েছেন ব্যারিস্টার শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন। তিনি আশাপ্রকাশ করেছেন, ইসি বাগেরহাটের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করবে।
আজ সোমবার (২৫ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে বাগেরহাট-৪ আসন বিলুপ্তির বিষয়ে শুনানি শেষে সাংবাদিকদের কাছে এ প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করেন শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন।
শেখ মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, এই কমিশন গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সৃষ্ট, তাই কমিশনকে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করতে হবে। আমরা আশা করছি, কমিশন বাগেরহাটের মানুষের প্রত্যাশা অনুযায়ী সেখানকার চারটি আসন বহাল রাখবে।
এই আইনজীবী বলেন, নির্বাচন কমিশন কোনো কারণ ছাড়াই বাগেরহাট জেলার চারটি আসন থেকে কমিয়ে তিনটি করেছে। বাগেরহাট জেলায় আসন কমানোর জন্য কেউ কোনো আবেদনও করেনি। আমরা শুনানিতে চারটি আসন বহাল রাখার বিষয়ে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেছি। শুধু তিনি নন, এ শুনানিতে অংশ নিয়ে আরও অনেকে তাদের যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করেছেন।
তাদের দাবি, কোনো যুক্তিতে সেখানে একটি আসন কমানো উচিত নয়। এটা করা হলে তা হবে রাষ্ট্র কর্তৃক জনগণের ওপর অন্যায় আচরণ। একটি আসন যদি কোনোভাবে কমানো হয়, তা জনজীবনের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। তাদের এ বক্তব্যগুলো কমিশনসহ ইসির কর্মকর্তারা শোনেন।
এদিকে বাগেরহাট-৩ আসনের প্রতিনিধি হিসেবে আসা এনসিপি যুগ্ম মুখ্য সংগঠক মোল্লা রহমতুল্লাল অভিযোগ করে বলেন, সংসদীয় আসন নিয়ে গতকাল আমরা আমাদের বক্তব্য পেশ করতে পারিনি। আজকেও কিন্তু আমরা আমাদের বক্তব্য তুলে ধরতে পারিনি। নির্বাচন কমিশন শুধু একটি দলের জন্যই কাজ করে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে আমাদের। ভোটার হিসাব কেন্দ্র করে তারা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা আমাদের যৌক্তিক বলে মনে হয় না
শুনানি শেষে ব্রিফিংয়ে বাগেরহাট-৩ আসনের প্রতিনিধি অ্যাডভোকেট ওয়াহিদুজ্জামান দিপু সাংবাদিকদের বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বাগেরহাটে চারটি আসন। হঠাৎ করে ইসি আমাদের বলেছেন চারটি আসন থাকবে না। একটি আসন বাদ দেওয়া বাগেরহাটবাসী মানে না। এটা অযৌক্তিক আইন পরিপন্থি ও বাস্তবসম্মত নয়। ইসির এ সিদ্ধান্ত জনস্বার্থের পরিপন্থি।
ইসি জানায়, সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত সাতক্ষীরা-৩, ৪, যশোর-৩, ৬, বাগেরহাট-১, ২ ও ৩ আসন নিয়ে শুনানি করা হয়েছে। দুপুর আড়াইটা থেকে ৫টা পর্যন্ত ঝালকাঠি-১, বরগুনা-১, ২, পিরোজপুর-১, ২, ৩, চট্টগ্রাম-৩, ৫, ৮, ১৯, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান আসনের শুনানি হবে।
গত ১০ আগস্ট পর্যন্ত মোট ৮৩টি আসনের সীমানা নিয়ে ১ হাজার ৭৬০টি দাবি আপত্তি জমা পড়ে ইসিতে। এগুলোই নিষ্পত্তি করে চূড়ান্ত সীমানা প্রকাশ করবে ইসি।
গত ৩০ জুলাই ৩০০ সংসদীয় আসনের সীমানা পুনরর্নির্ধারণ করে খসড়া প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। এতে ভোটার সংখ্যার সমতা আনতে গিয়ে গাজীপুর জেলায় একটি আসন বাড়িয়ে ছয়টি করা হয়। বাগেরহাটের আসন চারটি থেকে কমিয়ে তিনটির প্রস্তাব করা হয়।
এ ছাড়া পরিবর্তন আনা হয় মোট ৩৯টি আসনে। এগুলো হলো-পঞ্চগড় ১ ও ২; রংপুর ৩; সিরাজগঞ্জ ১ ও ২; সাতক্ষীরা ৩ ও ৪; শরীয়তপুর ২ ও ৩; ঢাকা ২, ৩, ৭, ১০, ১৪ ও ১৯; গাজীপুর ১, ২, ৩, ৫ ও ৬; নারায়ণগঞ্জ ৩, ৪ ও ৫; সিলেট ১ ও ৩; ব্রাহ্মণবাড়িয়া ২ ও ৩; কুমিল্লা ১, ২, ১০ ও ১১; নোয়াখালী ১, ২, ৪ ও ৫; চট্টগ্রাম ৭ ও ৮ এবং বাগেরহাট ২ ও ৩ আসন। ইসির প্রকাশিত ওই খসড়ার তালিকার ওপর গত ১০ আগস্ট পর্যন্ত আপত্তি আহ্বানও করা হয়।
আগে বাগেরহাট-১ মোল্লারহাট-ফকিরহাট-চিতালমারি; বাগেরহাট-২ বাগেরহাট সদর, কচুয়া; বাগেরহাট-৩ রামপাল ও মোংলা, বাগেরহাট-৪ মোড়েলগঞ্জ ও শরণখোলা; এই চারটি আসন ছিল।
খসড়ায় বাগেরহাট-১ আসনে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। বাগেরহাট সদর, কচুয়া, রামপাল নিয়ে বাগেরহাট-২ আসন এবং মোংলা, মোড়েলগঞ্জ ও শরণখোলা উপজেলা নিয়ে বাগেরহাট-৩ আসন প্রস্তাব করা হয়েছে।