বাম্পার ফলনেও পাটকাঠি বিক্রিতে লাভের আশা পাটচাষিদের

বাম্পার ফলনেও পাটের বর্তমান বাজার মূল্য অনুযায়ী পাট চাষ করে পাটকাঠি বিক্রি করে লাভের স্বপ্ন দেখছেন পাটচাষিরা। পাটচাষি ও জেলা কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই জানা গেছে।
লালমনিরহাটে পাট জাগ দিতে (পচাতে) আর তা শুকাতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে কিষান-কিষানিরা। জেলার হাট-বাজারগুলোতে উঠতে শুরু করেছে কৃষকের উৎপাদিত নতুন পাট। এবার পাটের ফলন ভালো হলেও উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছে কৃষকরা।
সদর উপজেলার রাজপুর ইউনিয়নের কৃষক সুধাংশু জানান, গতবারের চেয়ে এবার পাটের বাজার ভালো। উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় পাটকাঠি বিক্রি করে লাভের আশা করছেন তিনি। প্রতি আটি পাটকাঠি বাজারে ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
কীটনাশক ও সারের দাম বেশি হওয়া এবং সেচ পাম্প দিয়ে পানি দিয়ে পাট চাষ করায় পাটচাষিদের উৎপাদন খরচ বেড়েছে। তাই পাট চাষে আগ্রহ কমলেও পাটকাঠি বিক্রি করে লাভের আশা করছে অনেক চাষি। এদিকে জমি থেকে পাট কেটে তা জাগ দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত পানি না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছে অনেক পাটচাষি।
সদর উপজেলার নবীনগর গ্রামের কৃষক তৈয়ব আলী এ বছর পাট চাষ করেছেন তিন বিঘা জমিতে। তিনি জানান তার উৎপাদন খরচ প্রায় ৯০ হাজার টাকা। তিন বিঘা জমিতে পাট চাষ করে যা ফসল পেয়েছেন তাতে পাট বিক্রি করলে লোকসানে পড়বেন তিনি। যদিও গত বছরের তুলনায় এবার পাটের বাজার মূল্য ভালো।
জানা গেছে, জেলার বিভিন্ন হাটে এ বছর পাটের দাম বেড়েছে। গত বছর প্রতি মণ পাট বিক্রি হয়েছে দুই হাজার ৭০০ থেকে দুই হাজার ৯০০ টাকায়, আর এবার পাটের দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৫০০ থেকে তিন হাজার ৮০০ টাকায়। অর্থাৎ, কৃষকরা গত বছরের তুলনায় প্রতি মণ পাটে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা মণপ্রতি বেশি পাচ্ছেন।
লালমনিরহাট সদর উপজেলাসহ আদিতমারী উপজেলার হাটগুলোতে পাটের বেচাকেনা শুরু হলেও সরবরাহ এখনও সীমিত। মূলত আগাম চাষিরাই পাট কেটে শুকিয়ে বাজারে তুলতে পারছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুরো পাট বাজারে আনতে আরও দু-এক সপ্তাহ লাগবে।
জেলা সদরের মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের চিনিপারা গ্রামের কৃষক হেলেন আলী (৫২) বলেন, এবার পাটের ফলন ভালো হয়েছে, দামও পাচ্ছি সন্তোষজনক। তবে এই দাম কত দিন থাকবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে।
জেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, চলতি বছর লালমনিরহাট জেলায় পাট চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় তিন হাজার ৯৪০ হেক্টর জমিতে। আর জেলায় পাট চাষ হয়েছে তিন হাজার ৯১৫ হেক্টর জমিতে। অনুকূল আবহাওয়া ও সময়মতো চাষের কারণে প্রতি বিঘায় গড়ে ৯ মণ ফলন হয়েছে।
তবে চাষিদের অভিযোগ, উৎপাদন খরচও বেড়েছে অনেক। কীটনাশক, সেচ, পাট জাগ দেওয়ার শ্যালো মেশিন ভাড়া ও শ্রমিক মজুরি- সব মিলিয়ে প্রতি মণে গড়ে অতিরিক্ত ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত ব্যয় বেড়েছে।
জেলা পাট সহকারী কর্মকর্তা সন্তোষ কুমার রায় জানান, পাটচাষিদের পাট চাষে আগ্রহী করতে তারা নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করেন। তারা যাতে পাটের ন্যায্য মূল্য পেতে পারেন সেজন্য তারা বাজার মনিটরিং ব্যবস্থাও জোরদার করছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মো. সাইখুল আরিফিন বলেন, পলিথিন নিষিদ্ধ হওয়ায় বিশ্বব্যাপী পাটের চাহিদা বাড়ছে। আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারিত হওয়ায় কৃষকদের জন্য এটি সম্ভাবনাময় একটি খাত।
সাইখুল আরিফিন জানান, তিস্তা মহা পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে আশপাশ দিয়ে কিছু শাখা নদী বের হবে যা কৃষকদের পাট চাষের জন্য ও পাট পচানোর জন্য সহায়ক হবে।