এনআইডির গুরুতর ভুল তদন্ত ছাড়াই নিষ্পত্তির সিদ্ধান্ত ইসির

জাতীয় পরিচয়পত্রে (এনআইডি) কোনো ব্যক্তির যদি গুরুতর ভুল থাকে, যা সংশোধন যোগ্য নয়, এমন আবেদন তদন্ত ছাড়াই নিষ্পত্তি করতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে, আবেদনটি বাতিল করার আগে সব ধরনের তথ্য যাচাই করবে সংস্থাটি। তারপর সংশ্লিস্ট ব্যক্তিকে জানিয়ে আবেদনটি বাতিল করে দেওয়া হবে৷
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে আগস্ট মাসের মাসিক সমন্বয় সভার কার্যবিবরণী ধরে সেপ্টেম্বর মাসের মাসিক সমন্বয় সভা হয় ইসিতে। এ সভায় এজেন্ডাভিত্তিক আলোচনার এক পর্যায়ে এনআইডি সংশোধন সংক্রান্ত ইস্যুটি সামনে এলে কমকর্তারা এর সুবিধা-অসুবিধাগুলো তুলে ধরে কথা বলেন।
এক পর্যায়ে মাসিক সমন্বয় সভার সভাপতি ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমদ গুরুতর ভুলযুক্ত এনআইডির আবেদনগুলো তদন্তের নামে অযথা হয়রানি বন্ধে ওই কঠোর বার্তা দেন।
এর আগে যেকোনো আবেদন জমা হলে দ্রুত তদন্তে পাঠিয়ে দিত কমিশন। এ নিয়ে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে ইসির বিরুদ্ধে। তদন্তের নামে সেবা প্রত্যাশী ব্যক্তিকে অযথা হয়রানি ও পেরেশানি কমাতে কমিশন এমন যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। ইসির সমন্বয় সভা সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
এ ছাড়া ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের খসড়া ভোটকেন্দ্র ও ভোটার হালনাগাদ করার সময়ে মৃত ব্যক্তিদের নাম কাটা নিয়েও আলোচনা হয় সভায়। সভায় উপস্থিত একাধিক ইসির কর্মকর্তা এ তথ্য জানান।
সভা সূত্র জানায়, কোনো ব্যক্তি নিজের এনআইডিতে থাকা ভুল সংশোধনের আবেদন করলেও সেটা উপজেলা পর্যায়ে তদন্তে পাঠানোর জন্য অনুরোধ পেয়ে থাকেন নানা মহল থেকে। কোনো ক্ষেত্রে নিজ অফিসের স্টাফ এর পক্ষ থেকে কিংবা ক্ষেত্র বিশেষে আবেদনকারীর দিক থেকে। কর্মকর্তা অনেক সময় অনুরোধ রক্ষার্থে আবেদনটি তদন্তে পাঠান। এ সুযোগে এক শ্রেণির সুবিধাভোগী ওই ব্যক্তিকে জিম্মি করে তদন্তের নামে অর্থ হাতিয়ে নেন। এ নিয়ে অনেক সময় সংশ্লিষ্ট অফিসারদের বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়তে।
সেজন্য সমন্বয় সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন, আগামীতে এনআইডি সংশোধনে যে আবেদনটি পড়বে এর ধরন অনুযায়ী ক্যাটাগরি (ক থেকে ঘ) নির্ণয় করা হবে। এরপর সেগুলোর মধ্যে কোনটি সংশোধনযোগ্য, কোনটি তদন্ত সাপেক্ষে সংশোধনযোগ্য এবং কোনটি একেবারেই সংশোধনযোগ্য নয়, এর আলোকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ সময় উদাহরণ হিসেবে কয়েকজন কর্মকর্তা আবেদনের ধরন ব্যাখ্যা করে সভায় জানান, একজনের নাম মো. আবদুল হামিদ। কিন্তু তিনি চাচ্ছেন আবদুর গফুর। এ সময় সচিব আখতার আহমেদ বলেন, এই ধরনের গুরুতর সংশোধনের আবেদনের ক্ষেত্রে মাঠ পর্যায়ে তদন্তে পাঠানোর প্রয়োজন নেই। অফিসাররা আবেদনটি পর্যালোচনা করে কেনো সংশোধনযোগ্য নয় তা নিষ্পত্তি করে ব্যক্তিকে জানিয়ে দিবেন। এর মাধ্যমে এনআইডি সংশোধনের নামে হয়রানি সহজেই কমে আসবে।
সভায় উপস্থিত ছিলেন এনআইডি অনুবিভাগের ডিজি এ এস এম হুমায়ুন কবীর। তিনি এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এনআইডি নিষ্পত্তির বিষয়ে আলাপ ওঠে। তখন কীভাবে দ্রুত তা যথাযথ প্রক্রিয়ায় সমাধান করা যায়, সেই সিদ্ধান্ত আসে সচিব স্যার থেকে।’
এদিকে, আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রের সম্ভাব্য খসড়া তালকা প্রকাশ করেছে ইসি। গত সপ্তাহে প্রকাশিত তালিকার উপরে দাবি-আপত্তি চলছে। এবছর কেন্দ্রের সংখ্যা ৪২৬১৮টি। দ্বাদশ সংসদে এ সংখ্যা ছিল ৪২ হাজার ০৪৫টি। ব্যয় সংকোচন নীতি অনুসরণ করায় এবার ভোটার বাড়লেও ভোটকেন্দ্র বাড়ায়নি ইসি। আগের নির্বাচনগুলো পুরুষ ভোটকক্ষের জন্য সর্বোচ্চ ৫০০ জন এবং নারীর জন্য ৪০০জন ভোটার ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা রাখতেন।
আগামী নির্বাচনে পুরুষ ও নারীর ক্ষেত্রে ১০০ জন করে বাড়িয়ে যথাক্রমে ৬০০ ও ৫০০জন করা হয়েছে। ভোটকেন্দ্র না বাড়লেও দাবি-আপত্তি কম পড়েছে বলে সমন্বয় সভায় মাঠ কর্মকর্তা জানান। জবাবে সচিব বলেন, আপনারা (কর্মকর্তা) সঠিকভাবে কেন্দ্র স্থাপন করায় অভিযোগ কম পড়েছে। ৩০০ সংসদীয় আসনের বিপরীতে অভিযোগ জমা পড়েছে কম-বেশি অর্ধশত। কমিশনের কর্মকর্তা ভোটকেন্দ্র স্থাপনে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেওয়ায় তাদের ধন্যবাদ দেন ইসির সিনিয়র সচিব।