‘রাজাকারের তো ফাঁসি দিছি, এবার তোদেরও তাই করব’

জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে হামলা, গুলিবর্ষণ, হত্যাসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দিয়েছেন প্রসিকিউর তানভীর হাসান জোহা।
আজ বুধবার (২৪ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে এ জবানবন্দি দেন প্রসিকিউর তানভীর হাসান জোহা। এ নিয়ে এ মামলায় ৫১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা সম্পন্ন হয়েছে।
এদিন শেখ হাসিনার সঙ্গে সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নুর তাপস, ঢাবির সাবেক উপাচার্য (ভিসি) মাকসুদ কামাল ও সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর ফোনালাপের অডিও রেকর্ড আদালতে উপস্থাপন করা হয়। ২০২৪ সালের ১৪ জুলাই রাত ১১টা ২৮ মিনিট ৪৩ সেকেন্ডে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মাকসুদ কামালের ফোনালাপ হয়। শেখ হাসিনা ও মাকসুদ কামালের ওই কথোপকথন তুলে ধরা হলো—
শেখ হাসিনা : হ্যালো
মাকসুদ কামাল : আপা, সালামালাইকুম
শেখ হাসিনা : হ্যাঁ, ওয়ালাইকুম আসসালাম
মাকসুদ কামাল : প্রত্যেক হল থেকে তো ছেলে-মেয়েরা তালা ভেঙে বের হয়ে গেছে। এখন তারা রাজু ভাস্কর্যে। চার-পাঁচ হাজার ছেলে-মেয়ে জমা হইছে। মল চত্বরে জমা হয়েছে এবং যেকনো মুহূর্তে আমার বাসাও অ্যাটাক করতে পারে।
শেখ হাসিনা : তোমার বাসা প্রটেকশনের কথা বলে দিছি।
মাকসুদ কামাল : জ্বি, জ্বি
শেখ হাসিনা : আগে একবার করছে....
মাকসুদ কামাল : ঐ রকম একটা প্রস্তুতি, লাঠিসোঁটা নিয়ে বের হইছে।
শেখ হাসিনা : লাঠিসোঁটা নিয়ে বের হলে হবে না। আমি পুলিশ এবং বিডিআর ইয়ে বিজিবি আর... বলছি খুব অ্যালার্ট থাকতে এবং তারা রাজাকার হইতে চাইছে তো, তাদের সবাই রাজাকার। কী আশ্চর্য! কোন দেশে বসবাস করি?
মাকসুদ কামাল : জ্বি, জ্বি। বলতেছে আমরা সবাই রাজাকার।
শেখ হাসিনা : তো, রাজাকারের তো ফাঁসি দিছি, এবার তোদেরও তাই করব। একটাও ছাড়ব না, আমি বলে দিছি। এই এতদিন ধরে আমরা বলিনি, ধৈর্য ধরছি। তারা আবার বাড়ছে।
মাকসুদ কামাল : বেশি বেড়ে গেছে এবং অতিরিক্ত বেড়ে গেছে, অতিরিক্ত.....। তো আপা একটু ক্যাম্পাসের নিরাপত্তাটা আরেকটু বাড়ানো আর আমার বাসার ওইখানেও.....।
শেখ হাসিনা : ক্যাম্পাসের ব্যবস্থা করছি, সমস্ত ক্যাম্পাসে। বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ—সব রকম ব্যবস্থা হইছে। তোমার বাসার ভেতরে লোক রাখতে বলছি। ভেতরে কিছু রাখা আছে। এত বাড়াবাড়ি ভালো না।
মাকসুদ কামাল : অসম্ভব। বিজয় একাত্তর হলে ছাত্রলীগের ছেলেদেরকে মেরেছে। আরও দুই একটা হলে একই কাজ করেছে। ছাত্রলীগের ছেলেপেলে সাদ্দাম, ইনান, শয়ন—ওরা আমার বাসায় ছিল সন্ধ্যা থেকে। আমি খবর পাচ্ছিলাম, ওদেরকে আমি ডেকে নিয়ে আসছি, ওরাও আসছে। ওদের সাথে বসে, ওদের হলে হলে যেন ছাত্রলীগকে সংঘবদ্ধ রাখে এবং ঢাকা উত্তর, দক্ষিণকে যেন খবর দেয়। এগুলো করতে করতেই হাজার হাজার ছেলে-মেয়ে একত্র হয়ে গেছে।
শেখ হাসিনা : কোন দেশে বাস করি আমরা? এদেরকে বাড়তে বাড়তে তো...। রাজাকারদের কী অবস্থা হয়েছে দেখিস নাই, সবগুলাকে ফাঁসি দিছি, এবার তোদেরও ছাড়বে না।
মাকসুদ কামাল : হ্যাঁ, এবার এই ঝামেলাটা যাক। এরপরে আমিও নিজে ধরে ধরে যারা এই অস্থিরতা সৃষ্টি করছে, মেইন যারা আছে, এদেরকে বহিষ্কার করব ইউনিভার্সিটি থেকে।
শেখ হাসিনা : সব এইগুলাকে বাইর করে দিতে হবে। আমি বলে দিচ্ছি—আজকে সহ্য করার পরে এরেস্ট (গ্রেপ্তার) করবে, ধরে নেবে এবং যা অ্যাকশন নেওয়ার নেবে। কারণ ইংল্যান্ডে এরকম ছাত্র-রাজনীতির জন্য মাঠে নামল, কতগুলি মেরে ফেলায় দিল না?
মাকসুদ কামাল : জ্বি, জ্বি, জ্বি
শেখ হাসিনা : ঐ অ্যাকশন না নেওয়া ছাড়া উপায় নাই। আমরা এত বেশি সহনশীলতা দেখাই, আজ এতদূর পর্যন্ত আসছে।
মাকসুদ কামাল : এটা তো, আমরাও তো সহনশীলতা। আমি ছাত্রলীগকে বলছি, তোমরা কোনো ধরনের ইয়ে করতে যাইও না। যেহেতু আদালতের বিষয়, আদালত নিষ্পত্তি করবে।
শেখ হাসিনা : না, এ আদালত হবে না, আবার ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিছে।
মাকসুদ কামাল : আবার রাষ্ট্রপতিকে কেউ এরকম বলে! রাষ্ট্রপতিকে ২৪ ঘণ্টার কেউ আল্টিমেটাম দেয় একটা দেশে?
শেখ হাসিনা : রাষ্ট্রপতিকে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিচ্ছে। বেয়াদবির একটা সীমা থাকে!
মাকসুদ কামাল : আপা, আমি আপনাকে, যদি অন্য কোনো খারাপের দিকে যায়, আমি আবার একটু জানাব। কিন্তু রাতের বেলা জানাব না, হয়তো আধা ঘণ্টা-এক ঘণ্টার মধ্যে হলে জানাব।
শেখ হাসিনা : কোনো অসুবিধা নাই, আমি সবসময়ই ফ্রি।
মাকসুদ কামাল : জ্বি, জ্বি, জ্বি। সালামু-আলাইকুম।