আলু বেশি উৎপাদন হওয়ায় কৃষক দাম পাচ্ছে না : কৃষি উপদেষ্টা

কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল অব. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, গত এক বছরে দেশে সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয়েছে আলু। তাই কৃষকরা আলুর দাম পাচ্ছে না।
আজ বৃহস্পতিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে গত এক বছরের সাফল্য, অর্জন ও সার্বিক অগ্রগতি বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
কৃষি উপদেষ্টা বলেন, দেশে গত এক বছরে ১১৫ দশমিক ৭৩৬ মেট্রিকটন আলুর উৎপাদন হয়েছে। উৎপাদন বেশি হওয়ায় আলু কোল্ড স্টোরেজ মজুত আছে।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, প্রথমবারের মতো আমরা চীনে আলু রপ্তানি করেছি। এছাড়া কৃষকদের ক্ষতি যেন না হয় তাই সরকার কৃষকদের থেকে ৫০ হাজার মেট্রিকটন আলু ক্রয় করবে।
কৃষি উপদেষ্ট আরও বলেন, আমাদের দেশি আলু দিয়ে ভালো মানের চিপস তৈরি হয় না। কারণ আমাদের আলুতে পানি বেশি থাকে। তাই বিদেশ থেকে আলুর নতুন বীজ আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, গত এক বছরে ধান, গম, ভুট্টা, ডাল, তেলবীজ ও সবজির উৎপাদন বেড়েছে। ফলমূলেও এসেছে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি। গত বোরো মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১৫ লাখ টন বেশি ধান উৎপাদিত হয়েছে।
উপদেষ্টা বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের সময় থেকে রেখে যাওয়া সারের বকেয়া পরিশোধ করে নিয়মিত সরবরাহ নিশ্চিত করা হয়েছে। সার আমদানিতে সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ায় সরকারের ২৩৩ কোটি টাকার বেশি সাশ্রয় হয়েছে। রাশিয়া থেকেও বিনামূল্যে ৩০ হাজার টন সার পাওয়া গেছে।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আরও বলেন, গত এক বছরে ৮৮ লাখ ৫৫ হাজার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষককে বিনামূল্যে সার, বীজ, চারা ও অন্যান্য সহায়তা বাবদ ৮৯৩ কোটি টাকার প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কৃষিঋণ বিতরণ, সেচ সহায়তা ও বাজার মনিটরিং চালু রয়েছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সহনশীল ধান ও অন্যান্য ফসলের নতুন জাত উদ্ভাবন করেছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ১০০টি মিনি কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ, আলু সংরক্ষণের জন্য এয়ারফ্লো মেশিন ব্যবহার এবং কৃষিপণ্য রপ্তানিতে নতুন বাজার তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, চীনের বাজারে প্রথমবারের মতো আম রপ্তানি হয়েছে, চলতি মৌসুমে ৬২ হাজার টন আলুও রপ্তানি হয়েছে। কাঁঠাল ও পেয়ারা রপ্তানির প্রক্রিয়া চলছে। কৃষিপণ্য রপ্তানি আয় বেড়েছে ১০ শতাংশ।
উপদেষ্টা বলেন, কৃষি খাতকে ডিজিটালাইজেশনের অংশ হিসেবে ‘খামারি’ নামের মোবাইল অ্যাপ চালু করা হয়েছে, যেখানে সার, বীজ, সেচ, আবহাওয়া ও ফসলের তথ্য মিলবে। সমন্বিত বীজ ব্যবস্থাপনা ও ক্রপ জোনিং সিস্টেমও চালু করা হয়েছে।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানান, কৃষি মন্ত্রণালয়ের ১০৯ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে শতাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, কয়েকজনকে দুদকে পাঠানো হয়েছে।
কৃষি উপদেষ্টা জানান, কৃষি উন্নয়ন রূপরেখা ২০২৫–২০৫০ প্রণয়ন করা হচ্ছে। লক্ষ্য হলো কৃষিকে টেকসই ও রপ্তানিমুখী করা, নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য উৎপাদন, কৃষক আয় বৃদ্ধি এবং জলবায়ু সহনশীল কৃষি ব্যবস্থা গড়ে তোলা।
সংবাদ সম্মেলনের শেষে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, কৃষিতে যে অগ্রগতি আমরা অর্জন করেছি, তা সরকারের কৃষিবান্ধব নীতি, গবেষণা ও সম্প্রসারণ কার্যক্রম এবং কৃষক ভাইদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল।