নতুন ট্রেন ও সংস্কারসহ ৮ দাবিতে কুলাউড়ায় রেল অবরোধ
দীর্ঘ আড়াই মাস ধরে আন্দোলন কর্মসূচির পর মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় আট দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে অবস্থান ধর্মঘট পালন করেছে আন্দোলনকারীরা। শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১টায় এই কর্মসূচি শুরু হয় ও একপর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা সিলেট থেকে ছেড়ে আসা আন্তঃনগর পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেনটি কুলাউড়া স্টেশনে অবরোধ করে। ট্রেনটি প্রায় আধা ঘণ্টা আটকে ছিল।
অবরোধ চলাকালে কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মহি উদ্দিন, কুলাউড়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. ওমর ফারুক, রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন ও স্টেশন মাস্টার রোমান আহমদের নেতৃত্বে পুলিশ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন।
আলোচনার একপর্যায়ে রেলওয়ের ডিআরএম মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আরিফ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কুলাউড়ায় এসে আলোচনা করে দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন। এই আশ্বাসের পর জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে আধা ঘণ্টা পর ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। পরে পাহাড়িকা এক্সপ্রেস ট্রেনটি গন্তব্যের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে।
আট দফা দাবি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক আজিজুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই অবস্থান ধর্মঘটে বক্তারা অভিযোগ করেন, আড়াই মাস ধরে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করা হলেও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কোনো প্রতিকার করেনি। তারা বলেন, রেল যোগাযোগে সিলেট বিভাগ সবসময় বৈষম্যের শিকার হচ্ছে ও এখানকার রেললাইন সবচেয়ে বেশি অবহেলিত। অথচ রেল বিভাগ আয়ের ক্ষেত্রে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে।
বক্তারা আরও ঘোষণা করেন, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ যদি ১৫ দিনের মধ্যে দাবি বাস্তবায়নে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করে, তবে আগামীতে শুধু অবস্থান ধর্মঘট নয়, একযোগে গোটা সিলেট জুড়ে রেল অবরোধের ডাক দেওয়া হবে।
আন্দোলন কর্মসূচি পরিচালনায় ছিলেন— অপর সমন্বয়ক আতিকুর রহমান আখই ও সাংবাদিক নাজমুল বারি সুহেল। অবস্থান ধর্মঘটে বক্তব্য দেন— সাবেক সংসদ সদস্য নওয়াব আলী আব্বাস খান, উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি জয়নাল আবেদীন বাচ্চু ও সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সজল, উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মো. জাকির হোসেন, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফজলুল হক খান সাহেদ, কুলাউড়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক খালেদ পারভেজ বখশ ও বিভিন্ন রাজনৈতিক, ব্যবসায়ী ও সাংবাদিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
আন্দোলনকারীদের অবস্থান ধর্মঘটে উত্তাপিত আট দফা দাবি গুলো হচ্ছে— সিলেট- ঢাকা, সিলেট-কক্সবাজার রেলপথে দুটি স্পেশাল ট্রেন চালু। আখাউড়া-সিলেট রেলপথ সংস্কার ও ডাবল লাইনে উন্নীতক করণ। আখাউড়া-সিলেট সেকশনে অন্তত একটি লোকাল ট্রেন চালু। আখাউড়া-সিলেট সেকশনে সব বন্ধ স্টেশন চালু করা। কুলাউড়া জংশন স্টেশনে বরাদ্দকৃত আসন সংখ্যা বৃদ্ধি। সিলেট-ঢাকাগামী আন্তঃনগর কালনী ও পারাবত ট্রেনের আযমপুরের পর ঢাকা অভিমুখী সব স্টেশনের যাত্রা বিরতি প্রত্যাহার। সিলেটের সঙ্গে চলাচলকারী ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় রোধে ত্রুটিমুক্ত ইঞ্জিন যুক্ত করা। যাত্রী অনুপাতে প্রতিটি ট্রেনে অতিরিক্ত বগি সংযোজন করতে হবে।
উল্লেখ্য, আট দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে কুলাউড়া জংশনসহ বিভিন্ন বন্ধ রেলস্টেশনে, সিলেট রেলস্টেশন, শ্রীমঙ্গল, ভাটেরা, টিলাগাঁও ও লংলা রেলস্টেশনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে।