নির্বাচন কমিশন সার্ভিস প্রতিষ্ঠায় অধ্যাদেশ জারি

‘নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন ২০০৯’ সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি করেছেন রাষ্ট্রপতি। এতে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগের জন্য ‘নির্বাচন কমিশন সার্ভিস’ নামে আলাদা একটি সার্ভিস প্রতিষ্ঠা করার কথা বলা হয়েছে। আজ রোববার (৫ অক্টোবর) রাতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এ অধ্যাদেশ জারি করেন।
এর আগে গত ১৮ সেপ্টেম্বর অন্তর্বর্তী সরকার এ সংশোধনী আনতে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া প্রস্তাব অনুমোদন করে।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন, ২০০৯ এর সংশোধনীতে ৫ নং আইনের ধারা ৩ এর উপ-ধারা (৪) এর পরিবর্তে নিম্নরূপ উপ-ধারা “(৪) নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগের জন্য নির্বাচন কমিশন সার্ভিস নামে একটি সার্ভিস থাকিবে” প্রতিস্থাপিত হয়।
তবে আলাদা ‘নির্বাচন কমিশন সার্ভিস’ প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন ২০০৯ এর ধারা ৩ এর উপধারা ৪ বহাল থাকবে।
এ বিষয়ে নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপসচিব মোহাম্মদ মনির হুসেন গণমাধ্যমকে বলেন, সার্ভিস মাত্র পৃথক হলো। এখন নিয়োগ প্রক্রিয়া পিএসসির অধীন, ইসি অধীন নাকি অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের অধীন হবে, সেটা আস্তে ধীরে ঠিক হবে।
বিচার বিভাগের মতো আলাদা নিয়োগ হবে কি না, এসব নিয়ে কমিশন এখন কাজ করবে।
এদিকে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন সদস্য ড. আব্দুল আলিম বলেন, এটা ভালো খবর যে, ইসির জন্য পৃথক সার্ভিস হলো। কারণ, ইসি কর্মকর্তারা স্বাধীন না হলে তো আসলে কাজ করতে পারেন না।
নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের দায়িত্ব
এ ছাড়া ২০০৯ সালের আইনের ৫ নম্বর আইনের ধারা ৪ সংশোধন করা হয়েছে। ওই আইনের ধারা ৪ এর উপ-ধারা (২) এর দফা (ক) এর নিম্নরূপ দফা (ক) প্রতিস্থাপিত হয়।
দফা (ক)-তে বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় নিম্নবর্ণিত দায়িত্ব পালনে নির্বাচন কমিশনকে সার্বিক সহায়তা দেবে—
১. জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও সংরক্ষণ;
২. জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভান্ডার প্রস্তুত ও সংরক্ষণ;
৩. জাতীয় সংসদ নির্বাচনের উদ্দেশ্যে নির্বাচনি আসনসমূহের সীমানা নির্ধারণ;
৪. রাষ্ট্রপতি, জাতীয় সংসদ, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন ও ইউনিয়ন পরিষদসমূহের নির্বাচন পরিচালনাসহ উপনির্বাচন এবং গণভোট অনুষ্ঠান;
৫. ভোট গ্রহণের নিমিত্ত সারাদেশে ভোটকেন্দ্র স্থাপন ও সরকারি গেজেটে প্রকাশ;
৬. রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন প্রদান, প্রতীক বরাদ্দ ও সংরক্ষণ, নিবন্ধনকৃত রাজনৈতিক দলের রেজিস্টার সংরক্ষণ, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলসমূহের সহিত নিয়মিত যোগাযোগ এবং সংলাপ আয়োজনসহ এতৎসংক্রান্ত কার্যাবলি;
৭. প্রত্যেক নির্বাচনের জন্য সারাদেশে ভোটগ্রহণের ব্যবস্থাদি গ্রহণ এবং ভোটগ্রহণের নিমিত্ত প্যানেল ও নিয়োগকৃতদের তালিকা সংরক্ষণ (যেমন- রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার);
৮. ব্যালট পেপারসহ সব ধরনের নির্বাচনি মালামাল মুদ্রণ, সরবরাহ এবং নির্বাচনের পর সংগ্রহের ব্যবস্থা গ্রহণ;
৯. রাষ্ট্রপতি, জাতীয় সংসদ, গণভোট এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ফলাফল সংগ্রহ এবং প্রেরণ সংক্রান্ত ব্যবস্থা গ্রহণ;
১০. প্রত্যেক নির্বাচনের ফলাফল একত্রীকরণ এবং সরকারি গেজেটে প্রকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ;
১১. স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নির্বাচনি দরখাস্ত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে ট্রাইব্যুনাল গঠন এবং এতৎসংক্রান্ত কার্যাদি সম্পাদন;
১২. নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে নিয়মিত গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা এবং এতদুদ্দেশ্যে সব ধরনের তথ্য সংগ্রহ, একত্রীকরণ এবং রক্ষণাবেক্ষণসহ তথ্য অধিকার আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে তথ্য প্রদানের মাধ্যমে সহায়তাকরণ;
১৩. জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনের পর রিপোর্ট তৈরি ও প্রকাশের ব্যবস্থা গ্রহণ;
১৪. নির্বাচনি আইনি কাঠামো পর্যালোচনা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী সংশোধন, পরি সংযোজনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ।