ভেদাভেদ ভুলে জনগণের কল্যাণে কাজ করতে তারেক রহমানের আহ্বান

রাজনৈতিক মতভেদ ভুলে সবাইকে দেশের স্বার্থে একটি জায়গায় আসার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সংঘাতের ঊর্ধ্বে উঠে জনগণের কল্যাণে প্রতিযোগিতা করে, দেশের মানুষের দৈনন্দিন সংকট সমাধান এবং বাংলাদেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য ইতিবাচক রাজনীতিতে অংশ নিতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার (৬ অক্টোবর) পিরোজপুরের প্রবীণ বিএনপিকর্মী মোতালেব আকনের সঙ্গে ভার্চুয়াল সাক্ষাত অনুষ্ঠানে তারেক রহমান এ আহ্বান জানান।
তারেক রহমান বলেন, ‘বহু আন্দোলন হয়েছে দেশে, বহু সংগ্রাম হয়েছে, বহু মানুষ শহীদ হয়েছে। অনেক হয়েছে। আসুন, আমরা সবাই মিলে একটা জায়গায় আসি। মতভেদ-ভেদাভেদ কমিয়ে নিয়ে আসি। আমরা কথা বলি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন আদর্শ থাকতেই পারে, সেটাই থাকাটা স্বাভাবিক। আমরা বহুদলীয় রাজনীতিতে বিশ্বাস করি, এখানে বিভিন্ন রকম মত থাকবে—এটাই স্বাভাবিক। পৃথিবীতে সব গণতান্ত্রিক দেশেই এটা আছে। কিন্তু আসুন, আমরা সেই ঝগড়া-ফ্যাসাদ থেকে কিছুটা হলেও সরে আসি।’
রাজনৈতিক দলগুলোর উদ্দেশে তারেক রহমান বলেন, ‘অনেক আন্দোলন হয়েছে। এবার আসুন, দেশের মানুষের মৌলিক সমস্যাগুলো একটু একটু করে কমিয়ে আনি। আসুন, আমরা প্রতিযোগিতা করি, সেই পরিকল্পনাগুলো গ্রহণ করি। শুধু পরিকল্পনা নয়, দেশের মানুষ যাদের সুযোগ দেবে তারা যেন সেই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করতে পারে। এই হোক আমাদের আগামীদিনের রাজনীতি।’
যোগ্যতাভিত্তিক সমাজ গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা এমন পরিকল্পনা নিচ্ছি যাতে দেশের প্রতিটি তরুণ-তরুণী নিজে উপার্জন করতে পারে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে এবং মর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে পারে।
রাজনৈতিক হামলায় আহত হয়ে বর্তমানে হুইলচেয়ারে থাকা মোতালেব আকনের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ এমন হতে হবে, যেখানে রাজনৈতিক মতভেদের কারণে একজন মানুষকে শারীরিকভাবে আঘাত করতে না হয়, কেউ যেন আঘাতপ্রাপ্ত না হয়। আজ মোতালেব সাহেব তার সন্তানকে দেখালেন, এ রকম সন্তানের সংখ্যা বাংলাদেশে আরো লক্ষ-কোটি আছে। আমরা বলেছি, আগামী দিনে আমরা মেধার ভিত্তিতে দেশ ও জাতিকে গড়ে তোলার কথা বলেছি। স্বাভাবিকভাবেই মেধা যেখানে থাকবে, প্রতিযোগিতাও সেখানে থাকবে। আজকের তরুণ আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা থাকবে। মেধা একেকজনের একেক রকম হয়। সবাইকে এক জায়গায় আমরা দিতে পারব না।’
‘মেধার রেসে (দৌড়ে) যে এগিয়ে থাকবে, সে-ই সেখানে যাবে। কিন্তু যারা যেতে পারবে না তাদের জন্যও আমাদের ব্যবস্থা করতে হবে। আগামী দিনে দেশের লক্ষ-কোটি তরুণ যারা আছে, নারী-পুরুষ, প্রত্যেকে যাতে বেঁচে থাকার যুদ্ধে টিকে থাকতে পারে সেই ভাবে আমরা পরিকল্পনাগুলো গ্রহণ করছি। যাতে মোতালেব সাহেবের সন্তানরা ভবিষ্যতে নিজে সৎপথে উপার্জনের ব্যবস্থা করে নিতে পারে।’
এ সময় তারেক রহমান মোতালেব আকনের সুস্থতা কামনা করেন এবং জনগণের কল্যাণে নিজেকে নিবেদিত করতে বিএনপি নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা রাজনীতি করি। আমাদের মূল শক্তি বাংলাদেশের জনগণ। কাজেই বাংলাদেশের জনগণই আমাদের অনুপ্রেরণা। এ দেশের মানুষ স্বাধীনভাবে যতবার ভোট দেওয়ার সুযোগ পেয়েছে, তারা ততবারই বিএনপির পক্ষে রায় দিয়েছে। কাজেই এটাই প্রমাণ করে বাংলাদেশের মানুষই বিএনপির আস্থার প্রতীক।’
তারেক রহমান আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ কৃষিনির্ভর দেশ। লক্ষ-কোটি কৃষক বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিভিন্ন সমস্যার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। তার পরও তারা হাল ছেড়ে দেন না। তারা মাঠে থেকে কৃষিকাজ করছেন বলেই বাংলাদেশের ২০ কোটি মানুষ খেয়ে বেঁচে আছে। এই কৃষকদের পাশে কিভাবে দাঁড়ানো যায় সেই পরিকল্পনা করছি। বাংলাদেশের গ্রামে-গঞ্জে থাকা লক্ষ-কোটি মা-বোনদের কিভাবে আরেকটু স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলা যায়, তাদের কিভাবে অর্থনৈতিকভাবে, শিক্ষার আলোকে গড়ে তোলা যায় সেই পরিকল্পনা আমরা গ্রহণ করছি।’
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে পিরোজপুর জেলা বিএনপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও প্রবীণ নেতা মোতালেব আকন তারেক রহমানের সঙ্গে সরাসরি দেখা করার ইচ্ছা প্রকাশ করে আসছিলেন। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত এক বিশেষ প্রতিবেদনে তার এই দীর্ঘদিনের ইচ্ছার কথা উঠে এলে বিষয়টি তারেক রহমানের নজরে আসে।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তারেক রহমান ‘আমরা বিএনপি পরিবার’-এর আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমনকে নির্দেশ দেন মোতালেব আকনের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে। এরপরই শুরু হয় ভার্চুয়াল সাক্ষাতের প্রস্তুতি। এরপর আজ (সোমবার) সন্ধ্যায় লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রবীণ এ নেতা মোতালেব আকনের সঙ্গে যুক্ত হন তারেক রহমান।