ভারতীয় অবৈধ পণ্যে সয়লাব দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বাজার

ঈদুল ফিতর সামনে রেখে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে চোরাচালান চক্র। প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার ভারতীয় অবৈধ কাপড় ও দ্রব্যসামগ্রী এসব অঞ্চলের মার্কেটগুলোয় জমা হচ্ছে। এতে দেশীয় পণ্য বাজার হারাচ্ছে। আর রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চোরাকারবারিরা ভারত থেকে শাড়ি, থ্রিপিস, শার্ট ও প্যান্টের পিস, থানকাপড়, জিরা, গুঁড়া দুধ, মসলা, চকলেট বিস্কুট, ওষুধসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য এনে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাজারে পৌঁছে দিচ্ছে। এরই মধ্যে কিছু কিছু চালান আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জব্দও করেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা যায়, গত মঙ্গলবার খুলনার খানজাহান আলী সেতুর টোল প্লাজা এলাকা থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা দামের ভারতীয় শাড়ি জব্দ করেছেন মোংলা কোস্টগার্ড সদস্যরা। একই দিন ভোরে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার মুরারীকাটি এলাকা থেকে প্রায় ৫৮ লাখ ৪৫ হাজার টাকা মূল্যের ৩৭ গাইট ভারতীয় শাড়ি আটক করেছেন বিজিবি সদস্যরা। এর আগে গত ১৫ মে খানজাহান আলী সেতুর টোল প্লাজা এলাকা থেকে সোয়া দুই কোটি টাকা মূল্যের ভারতীয় কাপড় ও দ্রব্যসামগ্রী জব্দ করে মোংলা কোস্টগার্ড। তবে এসব অভিযানে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আড়ালে থেকে যায় মূল হোতারা।
বাংলাদেশ কোস্টগার্ড পশ্চিম (মোংলা) জোনের অপারেশন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট এম ফরিদুজ্জামান খান জানান, গত সোমবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে সংবাদের ভিত্তিতে রূপসা খানজাহান আলী সেতুর টোল প্লাজা এলাকায় ভারতীয় দামি শাড়িসহ পিকআপ জব্দ করা হয়। জব্দ হওয়া ৭২১টি শাড়ির আনুমানিক মূল্য ৫০ লাখ টাকার বেশি।
ফরিদুজ্জামান খান আরো জানান, সম্প্রতি খুলনাসহ পার্শ্ববর্তী জেলায় ভারতীয় পণ্যের চোরাচালান বাড়ায় বাগেরহাট, খুলনা ও সাতক্ষীরা এলাকায় কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের টহল জোরদার করা হয়েছে। কয়েকটি চক্র ভারতীয় কাপড়ের চোরাচালান করছে। তাদের প্রতিরোধে ও চোরাচালান বন্ধে কোস্টগার্ডের নিয়মিত অভিযান অব্যাহত থাকবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ঈদুল ফিতরের চাহিদা বুঝে কয়েকটি চক্র ভারতীয় কাপড় ও দ্রব্যসামগ্রীর মজুদ করেছে। খুলনার বড় বাজার, রেলস্টেশন, সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল ও গল্লামারী মোড়, দৌলতপুর, বটিয়াঘাটা উপজেলার জিরো পয়েন্ট ও ডুমুরিয়া থানার কয়েকটি স্থানে ভারতীয় অবৈধ পণ্যগুলো খালাস হয়। এসব অঞ্চলের বাজারগুলোতে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার জিরাসহ বিভিন্ন মসলা আসছে অবাধে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কারো কারো সঙ্গে যোগসাজশে চোরাকারবারিরা তাদের অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঈদুল ফিতর সামনে রেখে যশোরের বেনাপোল ও সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরসংলগ্ন সীমান্ত দিয়ে কোটি কোটি টাকার ভারতীয় পণ্য আসছে। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ডিজাইনের দামি শাড়ি, থ্রিপিস, শার্ট ও প্যান্টের পিস, জিরা, মসলা, গুঁড়া দুধ, চকলেট বিস্কুট ও ওষুধসহ নানা পণ্য। অন্য সময়ের চেয়ে ঈদ ও পূজার সময় চোরাকারবারিদের তৎপরতা বাড়ে।
চোরাকারবারিদের কারণে খুলনাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে দেশি বস্ত্র বাজার হারাচ্ছে। বেশির ভাগ ব্যবসায়ী বেশি লাভের আশায় দেশি কাপড় বিক্রি না করে ভারতীয় পণ্য বিক্রি করছেন।
এ ব্যাপারে কোস্টগার্ড পশ্চিম (মোংলা) জোনের জোনাল কমান্ডার ক্যাপ্টেন মেহেদী মাসুদ জানান, ঈদ সামনে রেখে ভারতীয় কাপড়ের চোরাচালান বেড়ে গেছে। এ কারণে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা এলাকায় কোস্টগার্ডের টহল বাড়ানো হয়েছে।