মায়ের অনুপ্রেরণায় আজ আমি এখানে : কাকলী জাহান

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক কাকলী জাহান আহমেদ। একজন সফল নারী। প্রথমে ছিলেন শিক্ষক পরে ব্যাংকার। খুলনায় জন্ম হলেও বেড়ে উঠেছেন ঢাকায়। মাধ্যমিকে পড়েছেন রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজে। উচ্চ মাধ্যমিক হলিক্রস কলেজে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর করেছেন। আজ ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে নারীদের বিভিন্ন প্রসঙ্গে এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা বলছেন তিনি। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান। তাঁর সাক্ষাতকারের চুম্বক অংশ নিচে তুলে ধরা হলো—
আন্তর্জাতিক নারী দিবস নিয়ে আপনার ভাবনা কী?
কাকলী জাহান আহমেদ : নারীর উন্নয়ন, নারীর অগ্রগামিতা, নারী পেশাগত জীবনে আসা, সেই সাথে নারীর স্বাস্থ্যসেবা, তাঁদের চলাচল, নিরাপত্তা সবকিছু নিয়েই নারীদের মূল্যায়নে বছরে একটি দিন নির্ধারণ করেছে জাতিসংঘ। সেই হিসেবে ৮ মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস বিশেষ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে। এদিন আমরা শুধু নারীদের কথা বলবো। একজন নারী দেশ ও বিশ্ব উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে বা রাখবে, সেসব কথা শুনবে। নারীদের জন্য চাই সুন্দর একটা পৃথিবী, যেখানে সবাই নিরাপদ। চাই পুরুষদের সাথে সমানতালে নারীরাও দেশ উন্নয়নে এগিয়ে যাবে।
কর্মক্ষেত্রে এসে নারীরা ঝড়ে যাচ্ছে কেন?
কাকলী জাহান আহমেদ : বাংলাদেশের বয়স ৫৩ বছর। আমাদের দেশে মোট জনসংখ্যা অনুপাতে নারীর সংখ্যা বেশি। সেই অনুপাতে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ কম। আমি এইভাবে চিন্তা করি, কর্মক্ষেত্রে এখনও উপরের দিকে অতো বেশি নারী নেই। আমাদের আশা অনুসারে কম। পারিবারিক কারণে কর্মক্ষেত্রে আসার পর মেধা থাকা সত্ত্বেও নারীরা ঝড়ে যায়। অনেকে চাকরি ছেড়ে দিচ্ছে সন্তান লালনপালনের জন্য। সামাজিক কারণে অনেকে চাকরি করতে পারছে না। এও দেখা যায়, অনেক সময় নারীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আসে না, ভয় পায়। ফলে কর্মক্ষেত্রের ওপরের দিকে নারীদের সংখ্যা কম। তবে গার্মেন্টসে নারীদের অবস্থান ভালো। সব মিলিয়ে গার্মেন্টসে এখন নারীদের সংখ্যা বেশি। এছাড়া ফার্মাসিউটিক্যালস, টেলিকম ও ব্যাংকে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ছে। এখন নারীদের মধ্যে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার এক ধরনের দৃঢ় মনোবল তৈরি হয়েছে। এতে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অবস্থান আরও অনেক বাড়বে।
কর্মক্ষেত্রে নারীদের অনিরাপদ পরিবেশ মোকাবিলার ক্ষেত্রে আপনার পরামর্শ কী?
কাকলী জাহান আহমেদ : অনিরাপদ পরিবেশ মূলত অফিসে থাকে না। অফিস পরিবেশ যেটা হয় এটা মানুষের তৈরি। নারী-পুরুষ কর্মকর্তারা মিলেই এই পরিবেশ তৈরি করছে। কারণ অফিসের তো কোনো প্রাণ নেই। সেতো ইট কাঠ পাথর। তাই আমি বলবো, অনিরাপদ শব্দটা মাথায় না রেখে আমাকেও মানসিকভাবে অনেক সবল হতে হবে। নারীকে কেবল আমি নারী, আমি দুর্বল, আমি পেছনে পড়ে থাকব, আমি সামনে যেতে পারবো না; এমন সামাজিক ভয়ে একটি মেয়ের গঠন তৈরি হচ্ছে। আমি মেয়ে এটা আমি করব না, মানুষ কী বলবে; ইত্যাদি ভাবনা মেয়েদের কর্মপরিবেশকে অনিরাপদ করে দেয়। অফিসে অনিরাপদ পরিবেশ নেই, সেটা আমি বলছি না। তবে আমার পরামর্শ থাকবে প্রতিটি অফিসে যেন নারীদের জন্য একটি বিশেষ কক্ষ থাকে। সেখানে যেন নারীরা তাদের কথা বলার সুযোগ পায়। তাদের সমস্যা ও সুবিধা নিয়ে আলোচনা করে। নিরাপত্তাহীনতা ও ঝুঁকি নিয়ে সতর্ক থাকে।
একজন নারীর সফলতার মূলে কোন অনুষঙ্গ সহায়ক ভূমিকা পালন করে? আপনার ক্ষেত্রে পরিবারের সহযোগিতা কতখানি?
কাকলী জাহান আহমেদ : একজন নারীর সফলতার মূলে রয়েছে পরিবার। যদি উদাহরণ দিয়ে বলি, সেই পরিবারের সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছে মা। একজন মেয়ের মানসিক গঠনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা মায়ের। সন্তানকে সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা দিয়ে সমাজের কাছে সুযোগ্য করে তুলছে পরিবার। আমি আমার কথা বলছি, আমরা তিন বোন। চাকরিজীবী ছিলেন আমার মা, বাবা ব্যবসায়ী। মা পরিবার ও চাকরি দুটোই করেছেন দক্ষভাবে। আমাদের বেড়ে ওঠা, পড়ালেখা ও আজকের এই আমি সবই যেন মায়ের হাতের ছোঁয়া রয়েছে। মা আমাদের শিখিয়েছেন বড় হতে হবে। মানুষের মতো মানুষ হতে হবে। কর্মজীবনে দক্ষভাবে হাল ধরতে হবে। দেশ ও দশের জন্য কাজ করতে হবে। মায়ের অনুপ্রেরণায় আজ আমি এখানে। বাবাও শক্তি জোগাতেন। তাই একজন নারীর মানসিক গঠনে পরিবার অনস্বীকার্য।

অবসরে আপনার সময় কাটে কী করে?
কাকলী জাহান আহমেদ : অবসরে আমি বই পড়ি। রিকশায় ঘুরতে পছন্দ করি। আর খেতে ভালোবাসি চটপটি ও ফুচকা।
নানা প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে আপনি আজ এই জায়গায় এসেছেন। আপনার জীবনের অভিজ্ঞতার কথা বলুন, যাতে নারীরা এগিয়ে যাওয়ার শক্তি পায়।
কাকলী জাহান আহমেদ : দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। মানুষের জীবন, অর্থনৈতিক বা অবকাঠামো উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন হচ্ছে মানুষের মানসিকতা। নারীদের এগিয়ে যেতে এখন আর আগের মতো বাধা নেই। আগের মতো শুনতে হচ্ছে না কারও কথা। এখন মেয়েদের প্রতি নিজের পরিবারের সদস্যদের চিন্তা-ভাবনা বেশ ইতিবাচক। একজন মেয়ের এখন এগিয়ে যাওয়ার সব সহায়তা পরিবার থেকে পাচ্ছে। আমি মনে করি, একজন নারীকে এগিয়ে যেতে হবে প্রথমত তার নিজের জন্য। পরিবারের জন্য। অধিকার আদায় করার জন্য। নিজেকে সফল মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য।
এনটিভি অনলাইনকে সময় দেওয়ার জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ।
কাকলী জাহান আহমেদ : আপনাকেও ধন্যবাদ।