সঞ্চয়পত্র, এফডিআর ও ডিপিএসে করমুক্ত চান প্রতিবন্ধীরা

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের করমুক্ত আয়সীমা বাড়িয়ে ছয় লাখ টাকা করার দাবি জানিয়েছেন বাংলাদেশ সোসাইটি ফর দ্য চেঞ্জ এন্ড অ্যাডভোকেসি নেক্সাস (বি-স্ক্যান)। এসময় সঞ্চয়পত্র, এফডিআর, ডিপিএসের ওপর ভ্যাট, কর ও সার চার্জ সম্পূর্ণ প্রত্যাহারসহ নারী উদ্যোক্তার মতো তারাও (প্রতিবন্ধী) ৭০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করছাড়ের সুবিধার দাবি করেছে।
আজ মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের রাজস্ব বোর্ড ভবনে অনুষ্ঠিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) প্রাক-বাজেট আলোচনায় সংগঠনটির পক্ষে মাহফুজ রাকীর এসব দাবি তুল ধরেন। এতে সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।
এনবিআর প্রতিবছর প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের দাবিগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করছে জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে বি-স্ক্যানের সাধারণ সম্পাদক সালমা মাহবুব জানান, এর মধ্যে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে ৫ শতাংশ প্রতিবন্ধী ব্যক্তি নিয়োগে ৩ শতাংশ কর রেয়াত, হুইলচেয়ারসহ শ্রবণযন্ত্রের ব্যাটারি, ব্রেইল প্রিন্টার আমদানির ক্ষেত্রে কর রেয়াত, প্রতিবন্ধী ব্যক্তির করমুক্ত আয়সীমা বৃদ্ধিসহ সুবিধা উল্লেখযোগ্য। কিন্তু এখন বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী মানুষদের স্বাধীন চলাচলের জন্য সহায়ক উপকরণগুলো সহজলভ্য নয়। অনেকক্ষেত্রে তা বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এতে অনেক টাকা মাসুল দিতে হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) ৫০টি অতি জরুরি সহায়ক উপকরণের তালিকা প্রকাশ করেছে যেগুলো আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া এবং ফিলিপাইন ইতোমধ্যে তাদের সরকার এসব উপকরণে শুল্কছাড় ও আমদানি প্রক্রিয়া সহজিকরণে বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন আমরা এনবিআরে জমা দিয়েছি। এ পর্যায়ে বাংলাদেশে কর কাঠামোকে আরো বেশি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবান্ধব করতে প্রতিবন্ধী মানুষের স্বার্থ সুরক্ষা, স্বাধীন ও মর্যাদাকর জীবনযাপন এবং সংগঠিত হওয়ার ক্ষেত্রে এনবিআরে আরও জোরালো ভূমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে।
প্রতিবন্ধী মানুষের স্বার্থে ওই লিখিত বক্তব্যে ১১টি দাবি তুলে ধরেন। এসব দাবি হলো- বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রদত্ত ৫০টি সহায়ক উপকরণের ওপর সবরকম শুল্কছাড় এবং আমদানি প্রক্রিয়া সহজীকরণ; ২০২৫-২৬ জাতীয় বাজেটে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ভাতা প্রতিবন্ধিতার মাত্রার ভিত্তিতে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত বরাদ্দ করতে তামাক ও তামাকজাত পণ্যের ওপর পাঁচ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা; প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের করমুক্ত আয়সীমা ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৬ লাখ টাকায় উন্নীত করা; প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য পূর্বে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা ভাতা করছাড়ের সুযোগটি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অতিরিক্ত চিকিৎসা ব্যয় বহনের অংশ হিসেবে পুনর্বহাল করা; প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মধ্যে অনেককে লিফটসহ বাড়িতে থাকার প্রয়োজন হয় সেটি বিবেচনা করে বাসস্থানের জন্যও বাড়ি ভাড়া ভাতা ৬ লাখ টাকা বা ৫০ হাজার টাকা ভাড়া পর্যন্ত করছাড়ের বিধান করা; প্রতিবন্ধী উদ্যোক্তাদের নারী উদ্যোক্তাদের মতো ৭০ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করছাড়ের সুবিধা প্রদান করা; বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান (যেসব প্রতিষ্ঠানে ২০০ বেশি কর্মী রয়েছে) এর কাছ থেকে ২ শতাংশ প্রতিবন্ধী কর্মী নিয়োগ না দিলে তাদের কাছ থেকে শূন্য কোটার অর্থ দিয়ে প্রতিবন্ধী বেকার বীমা তহবিল গঠন করে, ২০২৫-২৬ বাজেটে কর্মক্ষম প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মাসিক ৮ হাজার টাকা (সর্বোচ্চ তিন বছর পর্যন্ত) করে ৫০ হাজার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে বেকারবীমা প্রদান করা; প্রতিবন্ধী মানুষদের সঞ্চয়কে উৎসাহিত করতে তাদের সঞ্চয়পত্র, এফডিআর, ডিপিএস-এর উপর ভ্যাট, কর ও সার্চ চার্জ সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা; লিফট বা তার কাঁচামালকে বিলাসী পণ্য হিসেবে না দেখে একটি অতি জরুরি পণ্য হিসেবে বিবেচনা করে তার সকল আমদানি শুল্ক বা সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা; প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য কোন প্রবেশগম্য গণপরিবহণ নেই, সেই বিবেচনায় প্রবেশগম্য গণপরিবহণ আমদানি উৎসাহিত করতে করের ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ আমদানি কর মওকুফ করা; প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের স্বাধীন ও বাধাহীন চলাচল নিশ্চিত করতে কর ও শুল্ক মুক্ত ব্যক্তিগত গাড়ি আমদানি করার সুযোগ প্রদান করা।