বাজার দরে বিনিময় হবে ডলার : গভর্নর
ডলারের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। আজ বুধবার (১৪ মে) বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর হলে এ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে ভার্চ্যুয়ালি অংশ নিয়ে গভর্নর এই ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) আগামী জুনে বাংলাদেশকে তাদের কিস্তির ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার দেবে। এছাড়া বেশকিছু জায়গা থেকে আসবে ২ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার।
অর্থনীতির অবস্থা এখন ভাল, রেমিট্যান্স ও রিজার্ভ পজিটিভ জানিয়ে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, রেমিট্যান্স ৩০ শতাংশ বেড়েছে, রপ্তানিও ভাল। উন্নতি হয়েছে লেনদেন ভারসাম্যে। আমরা গত ৯ মাসে এক ডলারও বিক্রি করি নাই। এজন্য রিজার্ভ বেড়েছে। সামনে আরও বাড়বে। বিনিময় হার গত কয়েক মাস স্থিতিশীল অবস্থায় আছে, আমাদের হস্তক্ষেপ ছাড়াই। এমন পরিস্থিতিতে বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ব্যাংকারদের এ বিষয়টি বলা হয়েছে।
বাজারভিত্তিক করায় রেট অনেক বেশি বেড়ে যাবে না জানিয়ে গভর্নর বলেন, ডলার রেট অনেক দিন এক জায়গায়। মানে ১২২ টাকায় আছে। সামনেও এর আশেপাশেই থাকবে। হঠাৎ করে ১৪০ থেকে ১৫০ হবে, এর কোনো যুক্তি নেই। বাংলাদেশের ডলার রেট এদেশের নিয়ম অনুযায়ী ঠিক হবে, অন্যদেশের কথায় এখানে ডলার রেট ঠিক হবে না। বাজারে ডলারের যথেষ্ট সরবরাহ আছে। কোন সমস্যা হচ্ছে না।
কেউ কেউ বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করবে এমন উক্তি করে গভর্নর বলেন, বেশকিছু সিন্ডিকেট কোম্পানি আছে, যারা বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক সচেতন থাকবে। সব সময় তদারকি করা হবে। যদি কেউ ডলার রেট নিয়ে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আগামী জুনের মধ্যে আইএমএফ ঋণের পরের দুই কিস্তি ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার পাচ্ছে বাংলাদেশ জানিয়ে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এছাড়া আগামী জুনে বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, জাইকা, এআইআইবিসহ কয়েকটি সংস্থা থেকে আরও ২ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলারের ঋণ পাবে বাংলাদেশ। সবমিলিয়ে আগামী জুনে ৩.৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ পাবে বাংলাদেশ।
ব্যাংকের সুশাসন আমাদের নিশ্চিত করতে হবে জানিয়ে আহসান এইচ মনসুর বলেন, সুশাসন ফেরাতে এরই মধ্যে ১৪টি বোর্ড পরিবর্তন আনা হয়েছে। যেখানে ব্যাংকগুলোর গুণগতসহ নানা পরিবর্তন এসেছে। বিতরণ করা ঋণের ১০ শতাংশের বেশি খেলাপি হলে এখন লভ্যাংশ দিতে পারবে না ব্যাংক। পাশাপাশি নগদ জমা ও বিধিবদ্ধ জমায় ঘাটতির কারণে কোনো ব্যাংকের ওপর আরোপ করা দণ্ডসুদ বা জরিমানা অনাদায়ি থাকলেও লভ্যাংশ দিতে পারবে না ব্যাংক।
গ্রাহকদের স্বার্থ সুরক্ষা আমাদের মূল লক্ষ্য জানিয়ে গভর্নর বলেন, ইতোমধ্যে সমস্যা জড়িত ব্যাংকগুলোর সংস্কার শুরু হয়েছে। আমাদের যাত্রা শুরু হয়েছে। যারা উল্টাপাল্টা করবেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কাজ করছি, ব্যাংককে ঘুরে দাঁড়াতেই হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক আমানতকারীর সঙ্গে আছি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার, ড. মো. হাবিবুর রহমান ও কবির আহমেদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের উপদেষ্টা আহসান উল্লাহ, নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান প্রমুখ।