এনবিআর ভাগের অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে কলম বিরতি পালিত

সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিলুপ্তি করে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা এই দুই ভাগ করার অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। সেই অধ্যাদেশ বাতিল করার দাবিতে ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল বুধবারের মতো আজ বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সারাদেশের সব কাস্টমস, ভ্যাট ও কর অঞ্চলে কলম বিরতি পালিত হয়েছে।
অধ্যাদেশ বাতিল ছাড়াও আজ আরও দুই দাবি তুলে ধরে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। অন্য দাবিগুলো হলো- এনবিআরের সংস্কার সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটির প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশসহ পরামর্শক কমিটির প্রতিবেদন এবং অর্থনৈতিক শ্বেতপত্র আলোচনা সব অংশীজনদের মতামত নিয়ে সমন্বিত, অংশগ্রহণমূলক ও টেকসই রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কার করা।
আজ বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত পাঁচ ঘণ্টার কলম বিরতিতে সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী অংশগ্রহণ করেছেন, কলম বিরতির কর্মসূচিতে অংশীজনরা একাত্মতা প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ। তবে আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবা, আমদানি-রপ্তানি এবং জাতীয় বাজেট প্রণয়ন কার্যক্রম এই কর্মসূচির আওতার বাইরে আছে।
ঐক্য পরিষদের পক্ষে এনবিআরের অতিরিক্ত কমিশনার সিফাত ই মরিয়ম বলেন, এনবিআরকে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে আলাদা করতে গত ১৭ এপ্রিল খসড়া অধ্যাদেশে অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ। বাকি প্রক্রিয়া শেষ করে তা দ্রুত জারি হওয়ার কথা থাকলেও অধ্যাদেশের খসড়া অনলাইনে এলে তা দেখে আয়কর ও শুল্ক ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। এই দুই ক্যাডারদের কর্মীরা এটি বাতিলের দাবি তোলে। এর মধ্যে সোমবার রাতে অধ্যাদেশ জারি করে অন্তর্বর্তী সরকার। এই অধ্যাদেশ বাতিল দাবিতে দুইদিন যাবত এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কলম বিরতি পালিত হয়েছে।
প্রণীত রাজস্ব অধ্যাদেশ অবিলম্বে বাতিলসহ তিন দাবি তুলে ধরেন ঐক্য পরিষদের তরফে সিফাত ই মরিয়ম। অন্য দাবিগুলো হলো- জাতীয় রাজস্ব বোর্ড সংস্কার সংক্রান্ত পরামর্শক কমিটির প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশ করা। পরামর্শক কমিটির প্রতিবেদন এবং অর্থনৈতিক অবস্থা বিষয়ক শ্বেতপত্র আলোচনা-পর্যালোচনা প্রত্যাশী সংস্থাগুলোর, ব্যবসায়ী সংগঠন, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃত্বসহ সব অংশীজনদের মতামত নিয়ে সমন্বিত, অংশগ্রহণমূলক ও টেকসই রাজস্ব ব্যবস্থা সংস্কার করা।
দুর্নীতিমুক্ত রাজস্ব ব্যবস্থা করতে চাই জানিয়ে সংস্কার ঐক্য পরিষদ ব্যানারে সিফাত ই মরিয়ম বলেন, আমরা চাই হয়রানিমুক্ত, সেবাধর্মী ও জনবান্ধব রাজস্ব ব্যবস্থা। একইসঙ্গে রাজস্ব প্রশাসনের পূর্ণাঙ্গ অটোমেশন কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও কর্মকর্তাদের দক্ষতা উন্নয়নে টেকসই ও পর্যাপ্ত বিনিয়োগ নিশ্চিতকরণসহ গবেষণা ও পরিসংখ্যান উইংসহ এনবিআরের বিশেষায়িত উইংসমূহের কাঠামোগত ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা জোরদার করতেও চাই বলে জানান।
এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলেন, দুই ভাগ করার এই অধ্যাদেশ গভীর রাতে, কোনো গণশুনানি ছাড়াই, গোপনে জারি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে শুধু এনবিআর নয়, দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনাকেই বিপন্ন করে তোলা হচ্ছে। তাদের অভিযোগ, সরকার উন্নয়নমুখী অবস্থান থেকে সরে এসে আমলাতান্ত্রিক কায়দায় রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় হস্তক্ষেপ করছে। যা রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদে বড় ধরনের সংকট তৈরি করতে পারে।