জমে উঠেছে বিজিএমইএ নির্বাচন, মিলছে নানা প্রতিশ্রুতি

আগামী ৩১ মে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) নির্বাচন। গত বছরের ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর সংগঠনটির নতুন নেতৃত্ব পেতে জমে উঠেছে নির্বাচন। এবার মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছে সংগঠনটির দুই জোট—ফোরাম ও সম্মিলিত পরিষদ। তবে শেষ পর্যায়ে ‘ঐক্য পরিষদ’ নামে নতুন একটি জোটেরও আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। ফোরাম ও সম্মিলিত পরিষদ যথারীতি পূর্ণাঙ্গ প্যানেল দিয়েছে, তবে নতুন জোটটি ঢাকা ও চট্টগ্রামে ৩৫টি পদের বিপরীতে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছে মাত্র ছয়জনকে।
বিজিএমইএর পর্ষদ নির্বাচনে ফোরামের পক্ষে প্যানেল লিডার হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন রাইজিং ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান এবং সম্মিলিত পরিষদের নেতৃত্বে রয়েছেন চৈতি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম।
আজ শনিবার (২৪ মে) রাতে বিজিএমই ভবনে ফোরামের পক্ষে নির্বাচনি ইশতেহার তুলে ধরে পরিচিতি সভায় অংশ নেন প্যানেলের প্রার্থীরা। এ সময় পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয় ২০২৫-২৭ মেয়াদের নির্বাচনে তরুণ ও নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তাদের সমন্বয়ে গড়া ৩৫ সদস্যের প্যানেলের।
এতে আরও অংশ নেন ইভেন্স গ্রুপের চেয়ারম্যান ও বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ), ভার্চুয়ালি যুক্ত হন সাবেক সভাপতি ও মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবানা হক।
পরিচিতি সভায় ফোরামের প্রার্থীরা বলেন, আগামী দিনে বিজিএমইএকে একটি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক সংগঠনে পরিণত করা হবে, যা হবে মালিক ও শ্রমিকের। সংগঠনের নেতারা কেউ বিজিএমইএর অর্থে বিদেশ ভ্রমণ করবেন না এবং নিজের আত্মীয় পরিজনকেও তোষণ করবেন না বলেও প্রতিশ্রুতি দেন।
প্রার্থীরা আরও জানান, সদস্যদের সার্ভিস চার্জ ২০ থেকে ৩০ শতাংশ হ্রাস করা হবে। অপচয় কমিয়ে সেই অর্থ সাশ্রয় করার ঘোষণাও দেন নেতারা। এ ছাড়া একটি সুগঠিত, অংশগ্রহণমূলক ও শক্তিশালী বিজিএমইএ গঠনে নিরলসভাবে কাজ করার ঘোষণা দেন তারা। পাশাপাশি সদস্যদের স্বার্থ রক্ষা, উদ্ভাবন ও বাস্তবভিত্তিক নীতিমালা প্রণয়ন এবং বৈশ্বিক মালিকানা প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় কৌশল গ্রহণ করার কথাও বলেন তারা।
ফোরামের পক্ষ থেকে ঘোষিত ইশতিহারে আরও রয়েছে—পোশাকশিল্পের জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় তৈরি, এসএমই ও নতুন উদ্যোক্তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণে সব রকম সহযোগিতা প্রদান, কাস্টম অডিট প্রক্রিয়া আউটসোর্সিং করা যাতে উদ্যোক্তাদের সময় ও অর্থের অপচয় বন্ধ হয়; শিল্পের নিরাপত্তা, শ্রম অধিকার ও পরিবেশ সুরক্ষা; ক্রেতার জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা ও নতুন বাজার সম্প্রসারণ করা; বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটিকে বিজিএমইএর তত্ত্বাবধানে পুনর্গঠন করা; প্রকৃত রপ্তানিকারকদের বিজিএমইএতে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা; এলডিসি গ্রাজুয়েশনের পর জিএসপি প্লাস প্রাপ্তিতে শিল্পকে প্রস্তুত করা ও বিভিন্ন দেশের সঙ্গে এফটিএ/পিটিএ প্রতিষ্ঠায় সরকারের সঙ্গে কাজ করা; প্রতিটি নির্বাচিত প্যানেল মেম্বারদের ৫০টি করে ফ্যাক্টরির সমস্যা সমাধানের জন্য প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া; শিল্প জোনভিত্তিক ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেল প্রতিষ্ঠা করা; রুগ্ন ও ক্ষতিগ্রস্ত শিল্পের যথাযথ এক্সিট পলিসি নিশ্চিত করা এবং বহির্বিশ্বের ক্রমাগত নীতি পরিবর্তনের মধ্যেও শিল্পের সক্ষমতা ধরে রাখতে কাজ করা।
আগামী ৩১ মে ঢাকা ও চট্টগ্রামে একযোগে ভোট গ্রহণ চলবে। এবার মোট ভোটার ১ হাজার ৮৬৫ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ১ হাজার ৫৬১ ও চট্টগ্রামে ৩০৩ জন। গত বছর মোট ভোটার ছিলেন ২ হাজার ৪৯৬ জন। এবার শুধু সচল কারখানার উদ্যোক্তারাই ভোটার হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন।
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান এই নির্বাচনে সম্মিলিত পরিষদের প্রধান সমন্বয়কারীর দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া সংগঠনের সাবেক সহসভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রাম অঞ্চলের সমন্বয়কের দায়িত্বে রয়েছেন।