মোবাইল ওয়ালেট-আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চালু হচ্ছে আন্তঃলেনদেন
প্রতিবছর দেশে নগদ টাকার চাহিদা ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে। ফলে ব্যাংক খাতকে বছরে ২০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় বহন করতে হচ্ছে। এতে সরকারের সম্ভাব্য রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ১ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা। তাই নগদ নির্ভরতা কমিয়ে ডিজিটাল লেনদেন বাড়ানো জরুরি বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।
আজ সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ঢাকার হোটেল ওয়েস্টিনে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) বাংলাদেশ ও গেটস ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনায় গভর্নর এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে নীতিনির্ধারক, ব্যাংকার, ফিনটেক উদ্যোক্তা ও উন্নয়ন সহযোগীরা অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে আয়োজকরা জানায়, দেশে শিগগিরই ইনক্লুসিভ ইনস্ট্যান্ট পেমেন্ট সিস্টেম (আইআইপিএস) চালু করা হবে। এর মাধ্যমে মোবাইল ওয়ালেট, ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে একই নেটওয়ার্কে যুক্ত করা হবে। সহজ, দ্রুত ও সাশ্রয়ী ডিজিটাল লেনদেন নিশ্চিত করা এ উদ্যোগের মূল লক্ষ্য।
ডিজিটাল অর্থনীতির বিকাশে আন্তঃসংযোগ পরিশোধ পদ্ধতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জানিয়ে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এটি চালু হলে সরকারি ভাতা, ভর্তুকি ও বেতন সরাসরি এবং স্বচ্ছভাবে জনগণের কাছে পৌঁছে যাবে। একইসঙ্গে প্রতিযোগিতামূলক বাজার সৃষ্টি হবে, যা নতুন উদ্ভাবন ও সেবা সম্প্রসারণে সহায়তা করবে।
আর্থিক ব্যবস্থার বাইরে জনগোষ্ঠী প্রসঙ্গে ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আর্থিক অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করলেও এখনও ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ জনগোষ্ঠী আনুষ্ঠানিক আর্থিক ব্যবস্থার বাইরে রয়েছে। শুধু কভারেজই নয়, বরং জনগণের গভীরভাবে আর্থিক ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হওয়াই প্রকৃত অন্তর্ভুক্তির মানদণ্ড।
মাইক্রোক্রেডিট খাতকে প্রযুক্তিনির্ভর করে অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত করা প্রয়োজন জানিয়ে গভর্নর বলেন, এজেন্ট ব্যাংকিং খাত দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। এখন প্রায় ২০ হাজার এজেন্ট কাজ করছেন। দিনদিন এর সংখ্যা বাড়ছে। তবে ঋণ বিতরণে আরও উদ্যোগী হতে হবে।
নারীদের সম্পৃক্ততার ওপর গুরুত্বারোপ করে ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এখন থেকে অন্তত ৫০ শতাংশ এজেন্ট নারী হতে হবে। নারীরা ঘরে ঘরে প্রবেশ করে গৃহিণী, কন্যা ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের কাছে আর্থিক সেবা পৌঁছে দিতে পারবেন।
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারে পূর্বের সীমাবদ্ধতা তুলে দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর বলেন, এখন থেকে ব্যাংকগুলো আরও বেশি ক্রেডিট কার্ড ইস্যু করতে পারবে। এটি শুধু গ্রাহকদের সুবিধাই দেবে না, বরং আর্থিক লেনদেনের স্বচ্ছতার মাধ্যমে সরকারের রাজস্ব বাড়াবে। তিনি আরও বলেন, ন্যানো লোনের সীমা ৫০ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। সামনে আরও বাড়ানো হবে। তবে নগদ অর্থের ব্যবহার কমাতে মোবাইল ওয়ালেটে আসা টাকা যেন আবার নগদে উত্তোলিত না হয়, সে জন্য সারাদেশে ব্যবসায়ীদের বাংলা কিউআর কোড ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
গভর্নর বলেন, ডিজিটাল ব্যাংক চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে একটি সমন্বিত তাৎক্ষণিক পেমেন্ট সিস্টেমের আওতায় আনার পরিকল্পনা চলছে। পূর্বের ব্যর্থ অভিজ্ঞতা কাটিয়ে এবার গেটস ফাউন্ডেশনের সহায়তায় পরীক্ষিত মডেল মোজোলুপ ব্যবহার করে এ উদ্যোগ সফলভাবে বাস্তবায়ন করা হবে।