অনন্য উদ্যোগ, ঢাবিতে তৈরি হচ্ছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার

বাংলাদেশে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর হ্যান্ড স্যানিটাইজারের সংকট দেখা দেয় বাজারে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ল্যাবে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করেছে ফার্মেসি অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আজ রোববার দ্বিতীয় ধাপে আড়াইশ বোতল তৈরি করেন তাঁরা। এর আগে গত ১১ই মার্চ প্রথম ধাপে প্রায় দুইশর মতো বোতল তৈরি করে অনুষদের শিক্ষকরা।
নিজস্ব ল্যাবে বায়োমেডিক্যাল রিসার্চ সেন্টার ও ফার্মেসি অনুষদ যৌথভাবে এটি তৈরি করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষার জন্য তারা এটি তৈরি করেছে বলে জানান। অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড আব্দুর রহমান ও বায়োমেডিক্যাল রিসার্স সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক আ ব ম ফারুকের নেতৃত্বে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরির সঙ্গে যুক্ত আছেন ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক ডা. ফিরোজ আহমেদ ও ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি ও ফার্মাকোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মুহিতসহ অনুষদের শিক্ষার্থীরা।

এনটিভি অনলাইনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ডা. ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর বাজারে গিয়ে দেখি এসব পণ্য স্টক আউট হয়ে গেছে। কয়েকটি জায়গায় দাম দ্বিগুনের চেয়েও বেশি। তখন বায়োমেডিক্যাল রিসার্স সেন্টারের পরিচালক অধ্যাপক আ ব ম ফারুকের পরামর্শে আমরা এটি বানানোর সিদ্ধান্ত নিলাম। কেননা এরফলে অন্তত নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেন সুরক্ষিত থাকবে। আমরা নিজেদের দায়বদ্ধতা থেকে এটি প্রস্তুত করেছি। প্রথমদিন আমরা প্রায় ২০০ বোতল তৈরি করেছি।’ তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা আড়াইশর মতো বোতল বানাচ্ছি। এগুলো আমরা বিভিন্ন অনুষদ, বিভাগ ও হলগুলোতে দিব। এরপর ফান্ড পেলে এটি আরও বেশি প্রস্তুত করে শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে।’
অধ্যাপক ফিরোজ আরো বলেন, ‘আমরা এটি তৈরি করেছি যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীরা করোনা ভাইরাস থেকে সুরক্ষিত থাকতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের কাউকে এই হ্যান্ড স্যানিটাইজারের সুবিধা দেওয়া যাচ্ছে না।’
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোন ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছি। তারা এখনো পর্যন্ত কোন সহযোগিতা করেনি। তবে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান আশ্বাস দিয়েছেন। এখন ডিন অফিস থেকে আমাদের সহযোগিতা করা হচ্ছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘বাজারে হ্যান্ড স্যানিটাইজার পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি এটি তৈরি করতে গিয়ে এর কাঁচামালও পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যাচ্ছে না। আগে চীন থেকে কাঁচামাল আসত। কিন্তু এখন ভাইরাস ছড়িয়ে যাওয়ার কারণে এর বাণিজ্যও নেই। আবার জার্মানী বা অন্য দেশ থেকে আনতে গেলে খরচ বেশি।’ তিনি আরও বলেন, ‘করোনা একটি ভারি ভাইরাস। এটি বাতাসে ওড়ে না। মানুষের হাত থেকে বা হাঁচি দেওয়ার সময় এটি ছড়ায়। বিজ্ঞানসম্মত উপায় হচ্ছে, সবসময় হাত পরিষ্কার থাকলে এই ভাইরাস এড়ানো সম্ভব।’
উপাচার্য সবাইকে ব্যক্তিগতভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মধ্যে থাকতে পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘হ্যান্ড স্যানিটাইজার সব জায়গায় পাওয়া যাবে না। কিন্তু সবাই যেন নিয়মিত সাবান দিয়ে হাত পরিষ্কার করে। হাত থেকেই সবজায়গায় জীবাণু ছড়ায়। এজন্য সবসময় হাত পরিষ্কার থাকলে এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। যেটা বিজ্ঞান সম্মত।’
অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মুহিত এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এর কাঁচামাল আমাদের মজুদ ছিল। সেগুলো দিয়ে তৈরি করেছি। এজন্য দুইশ বোতল তৈরি করতে গিয়ে প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন কাঁচামালের চাহিদা বেড়েছে। আমরা যে পরিমাণ অর্ডার দিয়েছি তার দামের উপর নির্ভর করবে হ্যান্ড স্যানিটাইজারের দাম কেমন হবে।’
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘আমরা বিশ্ববিদ্যালয়কে সতর্ক থাকতে বলেছি। তারা যে জীবাণুনাশকটি তৈরি করেছে তা খুবই ভাল উদ্যোগ। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদেরকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি।’