আইসিটি আইনে গ্রেপ্তার রাবি সাংবাদিকের মুক্তির দাবি

তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ৫৭ ধারায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের করা মামলায় গ্রেপ্তার দৈনিক যুগান্তরের প্রতিনিধি মানিক রাইহান বাপ্পীকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার চত্বরে তাঁর নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকরা।
মানববন্ধনের রাবি রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি আরাফাত রহমান বলেন, ‘এ ধরনের মামলা গোটা সাংবাদিক মহলের জন্য হুমকিস্বরূপ। মূলত অভিযুক্তদের কর্মকাণ্ড আড়াল করার চেষ্টা থেকে ক্যাম্পাসে কর্মরত সাংবাদিকদের হয়রানি করাই এ মামলার উদ্দেশ্য বলে মনে করি। এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো পরিসরে সাংবাদিকেরা পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যদি হয়রানির শিকার হন, তবে অন্য ক্যাম্পাসগুলোতেও সাংবাদিকতার পথ আরো সংকুচিত হয়ে যাবে। কাজের পরিবেশ রুদ্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হবে। তাই দ্রুত এই মামলাটি প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। একইসঙ্গে গ্রেপ্তার মানিক রাইহান বাপ্পীর নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করছি।’
রাবি সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহিন আলম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সব সময়ই সাংবাদিকদের নিজেদের স্বার্থে ব্যবহারের চেষ্টা করেন। কোনো সাংবাদিক শিক্ষকদের স্বার্থের বিপরীতে অবস্থান নিলেই তাকে হেয় প্রতিপন্ন ও হয়রানি করতে উনারা উঠে পড়ে লাগেন।
এ ঘটনায় রাবি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বেলাল হোসাইন বিপ্লব বলেন, ‘শুরু থেকেই আমরা তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারার বিরোধিতা করে আসছি। এ ধারায় অপরাধ ও আইনের সামঞ্জস্যতা নেই। আমরা চাই দ্রুতই সাংবাদিক মানিক রাইহান বাপ্পীকে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া হোক।’
মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন রাবি প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি আকরাম হোসাইন, রাবি রিপোর্টার্স ইউনিটির সহসভাপতি হারুন অর রশিদ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আহমেদ ফরিদ, রাবি সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহিন আলম, উপদেষ্টা সুজন আলী প্রমুখ।
এর আগে, ২০১৫ সালের অক্টোবরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের তখনকার আবাসিক শিক্ষক ও কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক কাজী জাহিদের বিরুদ্ধে সিট বরাদ্দ দিতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে চাঁদা দাবির অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়।
এ সংবাদ প্রকাশের জের ধরে ২০১৫ সালের ২৪ অক্টোবর ক্ষুব্ধ ওই শিক্ষক যুগান্তরসহ ১৬টি পত্রিকার বিরুদ্ধে আইসিটি আইনে মামলা করেন। মামলার তদন্ত শেষে ২০১৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর আট জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মতিহার থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মোমিন। এতে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার সম্পাদক ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি সাইফুল ইসলাম, যুগান্তরের তৎকালীন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হাসান আদিব, মানিক রাইহান বাপ্পী ও রাজশাহীর স্থানীয় দৈনিক সোনালী সংবাদের সম্পাদক লিয়াকত আলীসহ আট সাংবাদিককে আসামি করা হয়।
এ মামলার পরিপ্রেক্ষিতেই গত শুক্রবার রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার হন সাংবাদিক মানিক রাইহান বাপ্পী। পরে শনিবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয় তাঁকে।
বাপ্পী রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের শিক্ষার্থী ছিলেন। এ ছাড়া রাবি প্রেসক্লাবের ২৯তম কার্যনির্বাহী কমিটিতে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।