খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন কাল, ক্যাম্পাসে সাজসাজ রব

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) ষষ্ঠ সমাবর্তন অনুষ্ঠান ঘিরে পুরো ক্যাম্পাসে সাজসাজ রব। আগামীকাল রোববার অনুষ্ঠিত হবে এই সমাবর্তন। এ উপলক্ষে উৎসবমুখর ক্যাম্পাসে চলছে চূড়ান্ত প্রস্তুতি। আজ শনিবার দুপুর সোয়া ২টায় শুরু হবে সমাবর্তন মহড়া। এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, হল ও উপাচার্যের বাসভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও অবকাঠামোগুলোতে অলোকসজ্জা করা হয়েছে।
এদিকে ক্যাম্পাসের ভেতর ও নগরীর দর্শনীয় স্থানে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির ছবি শোভা পাচ্ছে। পাঁচ হাজার অতিথি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন আধুনিকমানের বিশাল প্যান্ডেল ও মঞ্চ তৈরির কাজ শেষপর্যায়ে। এবারই প্রথম খুলনায় এ ধরনের আধুনিক প্যান্ডেলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ক্যাম্পাসের রাস্তায় চলছে আলপনা ও অন্যান্য সাজসজ্জা।
সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতিকে বরণ করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে খুবি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল সমাবর্তন অনুষ্ঠানস্থলসহ পুরো ক্যাম্পাসকে ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস এখন নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা।
এদিকে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আগে বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর বাইরের সব মহলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে সহযোগিতা কামনা করেছেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান।
সমাবর্তনের মূল অনুষ্ঠানসূচি অনুযায়ী, খুবির আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে প্রধান ফটকের অদূরে নবনির্মিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ‘কালজয়ী মুজিব’ উদ্বোধন করবেন তিনি। পরে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন রাষ্ট্রপতি।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ। সমাবর্তন বক্তার বক্তব্য দেবেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. অনুপম সেন। খুবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্জনসহ গুরুত্বপূর্ণ দিক উল্লেখ করে বক্তব্য দেবেন। এ ছাড়া স্বাগত বক্তব্য দেবেন ট্রেজারার অধ্যাপক সাধন রঞ্জন ঘোষ।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদের কয়েকজন সদস্য, খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র, সংসদ সদস্য, সচিব, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, সামরিক ও বেসামরিক, বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের প্রশাসন, বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংস্থার কর্মকর্তা, নির্বাচিত স্থানীয় সরকারের জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং ইলেকট্রনিক, প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ার প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
এবার ষষ্ঠ সমাবর্তনে চার হাজার ৪৭৮ জনকে স্নাতক, দুই হাজার ৫৩০ জনকে স্নাতকোত্তর, পাঁচজনকে এমফিল, আটজনকে পিএইচডি এবং ১৭ জনকে পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন এডুকেশন ডিগ্রি দেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের পরীক্ষার ফলাফলে অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য এবার ২৩ জন শিক্ষার্থীকে চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক দেওয়া হবে।
স্বর্ণপদক পাওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন বিজ্ঞান প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা অনুষদের রসায়ন বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের রুম্পা কুণ্ডু, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের মো. রাহাত আলী, পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের সুবর্ণা কুণ্ডু, গণিত বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের তন্ময় বৈরাগী ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের নাজমুস সাকিফ; জীববিজ্ঞান অনুষদের অ্যাগ্রোটেকনোলজি বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের ঈশিতা মন্ডল, ফার্মেসি বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের বিশ্বজিৎ বিশ্বাস, অ্যাগ্রোটেকনোলজি বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের জিনাত সুলতানা, একই বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ফারহান তানভীর ও ফার্মেসি বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের মাইশা মালিহা মেধা; সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অর্থনীতি বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শেখ ফাইজান বিন হালিম, ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের তহমিনা ইসলাম, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের রোজিনা আক্তার, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের সাবরিনা আক্তার ও ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের মুক্তা আক্তার; ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের ইমতিয়াজ মাশরুর, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ফারিহা আজাদ, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শাহানাজ আক্তার ও ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের তমালিকা বালা; চারুকলা অনুষদের ড্রইং অ্যান্ড পেইন্টিং বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শাপলা সিংহ ও ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের হিমা আক্তার হিরামণি, ভাস্কর্য বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের রূপক কুমার সাহা ও প্রিন্টমেকিং বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের আসমা চৌধুরী।
১৯৯০-৯১ শিক্ষাবর্ষ থেকে শিক্ষাকার্যক্রম শুরু হওয়ার পর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে এর আগে পাঁচটি সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম সমাবর্তন ১৯৯৭ সালের ১০ এপ্রিল, দ্বিতীয় সমাবর্তন ২০০১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি, তৃতীয় সমাবর্তন ২০০৭ সালের ১৯ মার্চ, চতুর্থ সমাবর্তন ২০১০ সালের ২৮ ডিসেম্বর এবং পঞ্চম সমাবর্তন ২০১৫ সালের ২৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়।
বর্তমানে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট অনুষদের সংখ্যা আটটি। এসব অনুষদ ও ইনস্টিটিউটের অধীনে মোট ২৯টি বিভাগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় সাত হাজার।