জবি শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা : শিক্ষককে দায়ী করছেন স্বজন ও সহপাঠীরা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া মেহজাবিন স্বর্ণার আত্মহত্যায় বিভাগের শিক্ষককে দায়ী করছেন নিহতের বোন ও সহপাঠীরা।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমি ব্যবস্থাপনা ও আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী সুমাইয়া মেহজাবিন স্বর্ণা গতকাল বুধবার তাঁর গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার পলাশ পোল মধুমাল্লার ডাঙ্গী গ্রামে আত্মহত্যা করেন।
এ ঘটনায় নিহতের বোন সাদিয়া মেহজাবিন সাথী আক্তার ও একাধিক সহপাঠী নিজ বিভাগের শিক্ষককে দায়ী করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দেন।
নিহতের বোন সাদিয়া মেহজাবিন সাথী বলেন, ‘আমার বোন খুবই ভালো ছিল। পড়াশুনায়ও খুবই ভালো ছিল। কিন্তু বিভাগের একজন শিক্ষক ওকে ভালো নাম্বার দিতেন না। তাছাড়া ওর বুধবার রাতেই ঢাকা চলে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সে যেতে চাচ্ছিল না, ফলাফল আবারো খারাপ হবে এই ভয়ে।’
সাথী আরও বলেন, ‘আমার বোন একটি বিষয়ে দুই মাস আগে অ্যাসাইনমেন্ট দিয়েছিল বিভাগের শিক্ষক আয়শা সালেহকে। কিন্তু তিনি সেটি হারিয়ে ফেলেন। এরপর দুই মাস পরে তিনি আবারও ওই অ্যাসাইনমেন্ট চান মাত্র ৩০ মিনিট সময়ের মধ্যে। এই শিক্ষকের কোর্সে সে ২০ নম্বরের মধ্যে মাত্র ছয় পেয়েছিল। এতেই তার ডিপ্রেশন আরও বেড়ে যায়। তার অ্যাসাইনমেন্ট নিয়ে তার বন্ধুরা ভালো ফলাফল করলেও তার নম্বর সবসময়ই কম থাকে। বিভাগের শিক্ষকদের কয়েকজন তার পোশাক নিয়েও কথা বলতেন।’
নিহতের একাধিক সহপাঠীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিভাগের শিক্ষকদের মধ্যে ‘দেখে নেওয়ার প্রবণতা’ ছিল অনেক বেশি। যে কারণে অজানা কারণে তার ফলাফল খারাপ হতো। আমাদের মধ্যে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ ছিল। কিন্তু তার ফলাফল সবসময়ই খারাপ হতো। এজন্য সে অনেক বেশি ডিপ্রেসড ছিল। বিশেষ করে ‘ফিসক্যাল ল’ বিষয়ে সে বরাবরেই খারাপ ফলাফল করত। এজন্য সে আত্মহত্যা করতে পারে বলে ধারণা করছি।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক আয়েশা সালেহ বলেন, ‘আমার কোর্সে সে ২০ এর মধ্যে আট পেয়েছে। সে অন্য শিক্ষকের পরীক্ষাতেও খারাপ করেছে। তার সঙ্গে আমার কোনো খারাপ সম্পর্কও ছিল না। তাছাড়া তার পোশাক নিয়েও আমি কোনো কথা বলিনি। যারা এসব কথা বলছেন তারা আবেগে বলছেন।’
বিভাগের অনেক শিক্ষার্থী এমন অভিযোগ করছেন কেন যে, আপনার কোর্সে খারাপ করে? এর উত্তরেন আয়েশা সালেহ বলেন, ‘আমি যে ‘ফিসক্যাল ল’ পড়াই এটি বেশ কঠিন একটি বিষয়। এটাই অংক আছে। তাই অনেকে খারাপ করে।’
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিভাগের চেয়ারম্যান খ্রিস্টিন রিচার্ডসন বলেন, ‘আমার কোনো শিক্ষার্থী কোনো শিক্ষক দ্বারা এমন হয়রানির শিকার হলে আমাকে তো কেউ অভিযোগ করেনি। এমন কিছু হওয়ার কথা না। আমার জানা মতে বিভাগের সব শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভালো।’
স্বর্ণার মৃত্যুর বিষয়ে সাতক্ষীরা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘সদর হাসপাতাল থেকে বেলা ২টার দিকে আমাদের স্লিপ দেওয়া হয়েছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা গিয়েছি। পরিবার থেকে আমাদের জানিয়েছে, গলায় রশি দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। আমাদের তারা আর কিছু জানায়নি।