দক্ষিণাঞ্চলে হবে শিল্পসমৃদ্ধ নগরী : ড. আইনুন নিশাত

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত বলেছেন, ‘পদ্মা সেতু দক্ষিণাঞ্চলে সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে। দক্ষিণাঞ্চলে হবে শিল্পসমৃদ্ধ নগরী। যা দেশের অর্থনীতিতে বিস্তর প্রভাব ফেলবে। পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে অর্থনীতিতে ঘুরে দাঁড়াবে বরিশালসহ সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল।’
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ রোববার সকালে জীবনানন্দ দাশ কনফারেন্স হলে ‘পদ্মা সেতু এবং এর আর্থ-সামাজিক প্রভাব’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নিশাত একথা বলেন। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ সেমিনারের আয়োজন করে।
দিনব্যাপী আয়োজিত এই সেমিনারে পদ্মা সেতুর অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক দিক নিয়ে ২৩টি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপিত হয়।
সেমিননারে ড. নিশাত বলেন, ‘বরিশালকে পর্যটনের জন্য অনেক আকর্ষণীয় করে তোলা যাবে, সেই জিনিস এখানে রয়েছে। আর ভোলার গ্যাস বরিশালে আনা হলে শিল্পে ব্যাপক উন্নয়ন হবে।’
আইনুন নিশাত বলেন, ‘পদ্মার ওপর সেতু নির্মাণ কোনোদিন বিশ্বাস করতাম না। এটা অত্যন্ত শক্তিশালী নদী। এখানে ফেলোসিটি সাড়ে চার মিটার পার সেকেন্ড। অর্থাৎ তীব্র স্রোত।’
পদ্মা সেতু তৈরির সময় নানা দিক তুলে ধরে নিশাত বলেন, ‘আমি নদীর ওপর কাজ করেছি, তাই আমরা চেষ্টা করেছি বুঝতে—নদী কী চায়, আর সেটাই পালন করতে চেষ্টা করেছি।’
পদ্মা সেতু তৈরির সময় মাছের দিকেও নজর রাখা হয়েছে জানিয়ে ড. নিশাত আরও বলেন, ‘পদ্মা সেতুর কারণে যাতে ইলিশ মাছ রাগ না করে সেজন্য পাইলকে মাফলার দিয়ে মোড়ানো হয়েছিল। হ্যামার দিয়ে পেটানোর শব্দ যাতে না হয়। পদ্মা সেতুর তলা দিয়ে ইলিশ মাছ যাতায়াত করে। দুইশ ডেসিমেলের ওপরে শব্দ হলে ইলিশ মাছ উল্টো দিকে চলে যায়। আমাদের বলা হয়েছে যেখানে নদীর গভীরতা ৩০ ফুটের বেশি সেখানে মৎস্য মন্ত্রণালয় যদি বলে ইলিশ মাছ যাচ্ছে, তখন কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। ইলিশ মাছের সময় কোনো কাজ করা হয়নি।’
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ছাদেকুল আরেফিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক এই সেমিনারে মুখ্য আলোচক হিসেবে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন ভারতের জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশীয় গবেষণা কেন্দ্রের অধ্যাপক ড. সঞ্জয় কে. ভরদ্বাজ।
সভাপতির বক্তেব্যে অধ্যাপক ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন বলেন, ‘পদ্মা সেতুর প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলের সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং সামগ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থায় অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হবে। যা এই অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মানকে উন্নতির দিকে ধাবিত করবে। আগামীতে দক্ষিণাঞ্চলে বরিশাল হবে অন্যতম বাণিজ্যিক ও শিল্পনগরী।’
সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার ও পর্যটন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া এবং একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কলামিস্ট মুক্তিযোদ্ধা অজয় দাশগুপ্ত।
এতে স্বাগত বক্তব্য দেন আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক অসীম কুমার নন্দী।