যে কারণে জিপিএ-৫ পেল না ৩৯৬ শিক্ষার্থী

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ফলাফলে দেখা গেছে, ৩৯৬ জন শিক্ষার্থী জেএসসি ও এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া সত্ত্বেও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আবার, জেএসসি-জেডিসি এবং এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ না পেলেও এবারের মূল্যায়নের ফলাফলে ১৭ হাজার ৪৩ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
জেএসসি ও এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়ার পরও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ না পাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, ‘আমরা ফলাফল তৈরির জন্য জেএসসির ফল থেকে ২৫ ভাগ নম্বর এবং এসএসসি থেকে ৭৫ ভাগ নম্বর গ্রহণ করেছি। গত বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল তৈরির জন্য সাবজেক্ট ম্যাপিং করায় জেএসসি-জেডিসি এবং এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেলেও এবার ৩৯৬ জন জিপিএ-৫ পায়নি।’
‘সাবজেক্ট ম্যাপিংয়ের কারণে জিপিএ-৫ পাওয়ার ক্ষেত্রে এমনটি হয়েছে। যখন ম্যাপিং করা হয়েছে, তখন জিপিএ-৫ পাওয়ার জন্য যে নম্বর দরকার ছিল, তা তারা পায়নি। আবার বিষয়ভিত্তিক ম্যাপিং করায় অনেকে আগের দুই পরীক্ষায় জিপিএ-৫ না পেলেও এবার সেটি অর্জন করেছে’, যোগ করেন শিক্ষামন্ত্রী। যে কারণে জেএসসি-জেডিসি এবং এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ না পেলেও এবারের ফলাফলে ১৭ হাজার ৪৩ জন জিপিএ-৫ পেয়েছেন বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।

এবার জিপিএ-৫ না পাওয়া পরীক্ষার্থীদের মধ্যে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী বেশি।
শিক্ষামন্ত্রী আরো জানান, জেএসসি ও এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেলেও ২০১৭ সালে ১৭ হাজার ৩৭১ জন, ২০১৮ সালে ৫২ হাজার ৬৩৪ জন এবং ২০১৯ সালে ৪৫ হাজার ৮৬৫ জন শিক্ষার্থী এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পায়নি।
অন্যদিকে, জেএসসি-জেডিসি এবং এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ না পেলেও ২০১৭ সালে ছয় হাজার ৯৭৬ জন, ২০১৮ সালে চার হাজার ১৫৭ জন এবং ২০১৯ সালে আট হাজার ৫৭০ জন শিক্ষার্থী এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছিল বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী।
যেভাবে হয়েছে সাবজেক্ট ম্যাপিং
শিক্ষামন্ত্রী জানান, জেএসসি ও সমমান পরীক্ষার ২৫ শতাংশ এবং এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ৭৫ শতাংশ হিসাব করে বিষয়ভিত্তিক নম্বর বিবেচনা করে গতবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল নির্ধারণ করা হয়েছে।
জেএসসি-জেডিসি পরীক্ষার আবশ্যিক বাংলা, ইংরেজি ও আইসিটি বিষয়ের নম্বরের ২৫ শতাংশ এবং এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার আবশ্যিক বাংলা, ইংরেজি ও আইসিটি বিষয়ের নম্বরের ৭৫ শতাংশ বিবেচনা করে এইচএসসিতে আবশ্যিক বাংলা, ইংরেজি ও আইসিটি বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিজ্ঞান বিভাগ
বিজ্ঞান বিভাগের ক্ষেত্রে জেএসসি ও সমমান পরীক্ষার গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ে প্রাপ্ত গড় নম্বরের ২৫ শতাংশ এবং এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন ও উচ্চতর গণিত/জীববিজ্ঞান বিষয়ের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনা করে যথাক্রমে এইচএসসির পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন ও উচ্চতর গণিত/জীববিজ্ঞান বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।
ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ
এই বিভাগের ক্ষেত্রে জেএসসি ও সমমান পরীক্ষার গণিত ও বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয়ে প্রাপ্ত গড় নম্বরের ২৫ শতাংশ এবং এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার গ্রুপভিত্তিক তিনটি সমগোত্রীয় বিষয়ের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনা করে যথাক্রমে এইচএসসির ব্যবসায় শিক্ষা গ্রুপের তিনটি সমগোত্রীয় বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।
মানবিক ও অন্যান্য বিভাগ
মানবিক ও অন্যান্য বিভাগের ক্ষেত্রে জেএসসি ও সমমান পরীক্ষার গণিত ও বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয়ে প্রাপ্ত গড় নম্বরের ২৫ শতাংশ এবং এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার গ্রুপভিত্তিক পর পর তিনটি বিষয়ের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনা করে যথাক্রমে এইচএসসির মানবিক ও অন্যান্য গ্রুপের তিনটি বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ ছাড়া গ্রুপ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে জেএসসি ও সমমান পরীক্ষার গণিত ও বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বিষয়ে প্রাপ্ত গড় নম্বরের ২৫ শতাংশ ও এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার গ্রুপভিত্তিক পর পর তিনটি বিষয়ের ৭৫ শতাংশ নম্বর বিবেচনা করে যথাক্রমে এইচএসসির মানবিক ও অন্যান্য গ্রুপের তিনটি বিষয়ের নম্বর নির্ধারণ করা হয়েছে বলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব-কমিটি জানিয়েছে। জিপিএ উন্নয়নের ক্ষেত্রেও এসব পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে। আংশিক বিষয়ের পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে অকৃতকার্য বিষয়ের নম্বর দেওয়ার ক্ষেত্রেও উপরে বর্ণিত পদ্ধতিতে ফলাফল নির্ধারণ করা হয়েছে।
ঢাকা বোর্ডের সিস্টেম এনালিস্ট মঞ্জুরুল কবীর জানান, আগের দুই পরীক্ষায় যারা চতুর্থ বিষয়ের জিপিএ মিলিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছিল, তাদের কেউ কেউ এবার পদ্ধতিতে মূল্যায়নের ফলে পূর্ণাঙ্গ জিপিএ (জিপিএ-৫) পাননি।
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়নে সবাই উত্তীর্ণ হয়েছে। এ বছর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল মোট ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭৭ জন। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন শিক্ষার্থী। যা মোট পরীক্ষার্থীর ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
জিপিএ-৫ পাওয়া পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ঢাকা বোর্ডে ৫৭ হাজার ৯২৬, রাজশাহী বোর্ডে ২৬ হাজার ৫৬৮, দিনাজপুর বোর্ডে ১৪ হাজার ৮৭১, যশোর বোর্ডে ১২ হাজার ৮৯২, চট্টগ্রাম বোর্ডে ১২ হাজার ১৪৩, ময়মনসিংহ বোর্ডে ১০ হাজার ৪০, কুমিল্লা বোর্ডে ৯ হাজার ৩৬৪, বরিশাল বোর্ডে পাঁচ হাজার ৫৬৮, সিলেট বোর্ডে চার হাজার ২৪২, কারিগরি বোর্ডে চার হাজার ১৪৫ ও মাদ্রাসা বোর্ডে চার হাজার ৪৮ জন রয়েছে।
এর আগে আজ শনিবার সকালে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থীদের মূল্যায়নের ফলাফল প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি সব বোর্ডের চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে ফলাফল গ্রহণ করেন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট থেকে আজ শনিবার সকাল পৌনে ১১টার দিকে এ ফলাফল গ্রহণ করেন শিক্ষামন্ত্রী। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে ফলাফল ঘোষণা করেন।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি সব বোর্ডের চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে ফলাফল গ্রহণ করেন। ছবি : সাইফুল সুমন