রাবিতে ২১ ফেব্রুয়ারির ব্যানারে বীরশ্রেষ্ঠদের ছবি

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) সংগীত বিভাগের একটি ব্যানারে ব্যবহার করা হয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সাত বীরশ্রেষ্ঠর ছবি। বিভাগটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে তাদের র্যালিতে এমন একটি ব্যানার ব্যবহার করে। পরে ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিভাগটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন।
তবে বিভাগের সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক দীনবন্ধু পাল এতে কোনো সমস্যা দেখছেন না। তিনি বলেন, ‘সব শহীদকে স্মরণ করে এ ধরনের ব্যানার তৈরি করা হয়েছে। র্যালিতে অংশগ্রহণকারীদের হাতের ফেস্টুনে বীরশ্রেষ্ঠ এবং ভাষাশহীদ সবারই ছবি ছিল। কিন্তু যখন ছবি তোলা হয়েছে, তখন হয়তো অংশগ্রহণকারীরা ফেস্টুন নামিয়ে নিয়েছিলেন। তাই হয়তো ভাষাশহীদদের সেসব ফেস্টুন আসেনি। এখানে কাউকে ছোট কিংবা বড় করা হয়নি।’
ব্যানারটিতে দেখা যায়, ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষাশহীদদের জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা’ শীর্ষক লেখার নিচে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো ব্যবহার করে লেখা ‘সংগীত বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়’। এক পাশে রয়েছে রক্তের ছটার ওপর শহীদ সাত বীরশ্রেষ্ঠর ছবি, অপর পাশে রয়েছে শহীদ মিনারের ছবি। শহীদ মিনারের ছবির ঠিক ওপরে লেখা ‘২১ আমার গর্ব’।
বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস উপলক্ষে বিভাগের সামনে থেকে র্যালি নিয়ে শহীদ মিনারে গিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। পরে সেখান থেকে আবার বিভাগের সামনে এসে র্যালি শেষ হয়।
বিভাগের শিক্ষকদের দাবি, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনসহ মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণ করে এ ধরনের ব্যানার তৈরি করা হয়েছে।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকরা বলছেন, এর মাধ্যমে ভাষাশহীদের অসম্মান জানানো হয়েছে। ভাষাশহীদ ও বীরশ্রেষ্ঠ সবাই আলাদা আলাদা প্রেক্ষাপটে ও স্বতন্ত্রভাবে সম্মানিত। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের ব্যানারে বীরশ্রেষ্ঠদের ছবি অনাকাঙ্ক্ষিত। এতে নতুন প্রজন্মের কাছে ভুল বার্তা যাবে। তারা ভাষাসৈনিক ও বীরশ্রেষ্ঠদের এক করে ফেলতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মুক্তিযোদ্ধা সরকার সুজিত কুমার বলেন, ইচ্ছাকৃত কিংবা অনিচ্ছাকৃত যাই হোক, এ ধরনের ভুল অমার্জনীয়। এর মাধ্যমে ভাষাশহীদদের প্রতি অসম্মান জানানো হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আবুল কাশেম বলছেন, আদি মানবিকের একটি শাখা সংগীত বিভাগের এ ধরনের ভুল অমার্জনীয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, তারা নির্বুদ্ধিতার পরিচয় দিয়েছে। আশা করছি, তারা ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে সতর্ক হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মো. ফয়সাল বলেন, ‘এখন আমরা আবেগ ও শ্রদ্ধাবোধের জায়গা থেকে না করে, নিজেকে জাহির করার জন্য মেতে আছি বলেই এমন ভুল হয়।’